পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

€3వ বিভূতি-রচনাবলী খবর দিতে ছুটলো। পরদিন সন্ধ্যায় মাধোলালের স্ত্রী মারা গেল, মাধোলালকে ধরলে প্লেগে । তৃতীয় দিনে মাধোলালও মারা গেল। একই সঙ্গে মাধোলালের এক বৃদ্ধ পিসিও দেহ রাখলেন। ছ'সাত দিনের মধ্যে মাধোলালের বাড়ীর সকলেই কাবার হলো—রাখনি বাদে । প্লেগ তখন আশেপাশের দু একটি বাড়ীতেও ধরেছে। ইতিমধ্যে একদিন ডাক্তার এসে সকলকে প্লেগের টিকেও দিয়ে গেল । বেঁচে গেলাম আমি ও রাখনি । আধমরা অবস্থায় বঁাচা । আমার তখন কোনো জ্ঞান-চৈতন্য নেই এমন অবস্থা । এমন দুর্দিনের মুখ কখনও দেখিনি, প্রতি মূহূর্তে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েচি । মৃত্যুর সে কি করুণ দৃষ্ঠ দেখেচি চোখের সামনে! রাখনিকে নিয়ে আরও মুশকিল—তাকে সাস্তুনা দেব কি, নিজের চোখের জল থামে না । যখন সব মিটে শেষ হয়ে গেল, প্লেগ থামলো, তখন ওদের বাড়ীতে আমি আর রাখনি আর ভক্তদাস বলে ওদের এক পুরনো চাকর—এই তিনজনে টিম্ টিম করচি। কয়েকদিন কেটে গেল। সরকারী লোকেরা এসে ঘরদের ধুয়ে ধোয়া দিয়ে ওষুধ ছড়িয়ে দিয়ে পুরনো কাপড়চোপড় পুড়িয়ে দিয়ে গেল। আমার আর ভাল লাগচে না, এখান থেকে বেরিয়ে পড়তাম, কিন্তু রাখনিকে কার কাছে ফেলে দিয়ে যাই—এই হয়েচে মহাসমস্ত । এ আবার কি বিষম বন্ধনে ভগবান আমায় জড়ালেন তাই ভাবি । বেশ ছিলাম স্বাধীন, খাই না খাই কোনো বন্ধন বা দায়িত্ব ছিল না । - গ্রামের লোক বলে, তুমি রাখনিকে বিয়ে করে ওদের বাড়ী থাকে। অবস্থা ওদের সত্যিই ভালে। যথেষ্ট জমিজমা, গরুবাছুর, গোলাভরা ধান, গম, যব, সর্ষে । এ সবের মালিক হয়ে থাকা বড় কম কথা নয়। ভেবে দ্যাখে বাংগালী বাবু, এ বড় চাটখানি কথা নয় আজকার দিনে । g রাখনি ? তার কথা কি বলবো । সে তো আমাকে বেশ ভালোবাসে । দিনরাত কামাকাটি করে, আমি তাকে বোঝাই, সান্তনা দিই । একদিন রাত্রে হল কি, সেই কুম্মবতী নদীর ধারে বসে আছি, রাত বেশী নয়—সবে সন্ধ্যা উৎরেছে, ঘুলি-ঘুলি অন্ধকার ঘন গাছের তলায়—এমন সময় রাখনি সেখানে এসে পেছন থেকে কাধে হাত দিয়ে দাড়ালো । - চমকে উঠে বল্লাম, কে রে? ও তুমি! এমন করে আসতে হয় ? ভয় করে না আমার ? —ভয় কিসের ? —তুমি তো ভূত মানো না বাবুজি— —মানি নে, আবার ভূত না মানলেও ভয় করে এই অন্ধকার রাত্রে। বসো রাখনি, একটা কথা ।