পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী 8د لم টুকরো কিন্তু মাগনিরামের বাবাকে একশো টাকা দিয়েছিল ঘাটোয়ালী কাছারি থেকে । কেন, তা বলি । বরজোর নালার ওপারে সরকুন্দা জঙ্গলের কিনারায় প্রকাগু পাগলা হাতীটা মরে পড়ে আছে—আবিষ্কার হল তিনদিন পরে। হাতীটার নাকের দুপাশে তখনো দুটো শলাগি থে ছিল। চেমন সাওতাল বীর শিকারী, শলা দেখে বল্পে—ই তো আমার হাতের শলা আছে হে ! বাস্কড়ির ছেলেটা আমার কাছ থেকে লিয়েছিল সেদিন । ওর মনে ই ছিল, সেটা কি ক’রে জানচি হে ? চেমন সর্দারের সাক্ষ্যের বলে ঘাটোয়ালী কাছারির পানিকর মাগনিরামের বাবাকে কাছারিতে ডেকে চারজন সাক্ষীর সামনে টিপসই নিয়ে নগদ দশ টাকার দশখন নোট ওর হাতে তুলে দিয়ে বল্লে--বাপের বেটা তো ইকে বোলে! চোখের জল না ফেলবি, উ তোর বেটা ছিল না, তোর বাবা ছিল হে ! পরিহাস অনেক বছর ব্যবধানে মানবজীবনে যে নাটক অভিনীত হয়, যে সূক্ষ্ম আবেদনের স্বষ্টি করে, এ গল্পটি তারই গল্প । রামতারক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মারা যান, ১২৬৫ সালে, তখন তার সম্পত্তি বেশ ভালোই ছিল কুডুলগাছিতে । রামতারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী-পুত্র ছিল না । তিনি র্তার সম্পত্তি ছোট ভাই রামগতিকে দিয়ে গেলেন । সন্ধ্যার সময় ছোট ভাইকে ডেকে বল্লেন–কিছু মনে করিস নে রামা—অনেক মামলা করেছি তোর সঙ্গে বিষয় নিয়ে । সব তো রেখে যেতে হল । সঙ্গে কিছুই নিয়ে যেতে পারলাম না। এখন সব বুঝতে পেরেছি ভাই, কিছুই কিছু না । নকলের জন্যে আসল হারিয়ে বসে আছি। একটা কথা বলি শোন। উঠোনের ঐ জবাতলায় আমার শ-পাচেক টাকা পোতা আছে। তুলে নিস্— রামগতির সঙ্গে দাদার মুখ-দেখাদেখি ছিল না বছদিন থেকে। কেউ কারো বাড়ীতে যেতে না, যদিও পাশাপাশি বাড়ী । রামগতি কেঁদে ফেলে বল্পেন—দাদা, তুমি কি বলচে, আমি যশাইকাটি থেকে নীলমণি কবিরাজকে কাল সকালেই নিয়ে আসবো । কোনো ভয় নেই দাদা, তুমি ভালো হয়ে উঠবে। রামতারক মান হেসে বল্পেন—এদিকে আয়, আশীৰ্ব্বাদ করি— নীলমণি কবিরাজকে আর আনতে হয়নি। শেষরাত্রের টাল আর সামলে ওঠেনি বৃদ্ধ রামতারক । বি, স্ব, ১১—২৬