পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী 3e(? তারা বল্লে—হঁ্যা বাবা, সেকি কথা ! আমাদের কাছে বাসন ? সে কবে নিয়ে গিয়েচে তোমার মা ! সে কি আজকের কথা বাবা ? না, না, থাকলে যে দেব না, তেমন অধৰ্ম্ম কাজ কখনো হবে না আমার হাড়ে । না বাবা, সে সব তোমার মা নিয়ে গিয়েছিল। কেউ কিছু দিলে না । অথচ তাদের অবস্থা ভাল, কোঠা বাড়ী—দু একজনের দোতলা বাড়ী। সবাই হাসিমুখে মিষ্টি কথায় ফাকি দিলে ওকে। দুটো বঁাশ ঝাড় গ্রামের খাম চক্কত্তি দিব্যি ভোগ-দখল করচেন খবর পেয়ে সেখানে যেতে বৃদ্ধ শ্যাম চক্কত্তি হেসে বল্লেন—এসে বাবা, এসো ও বঁাশঝাড় আমারই । সীমাছাড়া হয়ে পড়েছিল বলে তোমার বাবার সঙ্গে গোলমাল হয় ওই নিয়ে । গায়ের পাচজনকে জিগ্যেস করে দেখো । ও আমার পৈতৃক আমলের বঁাশঝাড় । মিটে গেল । সতু ছেলেমানুষ, বিষয়-সম্পত্তির কিই বা বোঝে, কিই বা জানে, ছেলেমানুষ পেয়ে সবাই ফাকি দিল ওকে । কেবল মুড়োরপাড়ার জীবন ডাক্তারদের বাড়ী ও সত্যিকারের স্নেহ পেলে খানিকটা । জীবন ডাক্তারের স্ত্রী ওকে বল্লেন—তুই তখন এতটুকু, এখানে আসতিস । তালশাস দিতাম হাতে, খেতিস বসে বসে । আহা তোর মা'র তো আর মরবার বয়স হয় নি, অল্প বয়সে মারা গেল ! অল্পভূগী লোক—বোস, দুটো মুড়ি খা । কে একজন একদিন ওকে এসে ধল্লে—বাবু, আপনাকে ডাকচে আপনাদের পুরানো চাকর হারাধন । সে উঠতে পারে না বিছানা থেকে, আপনি এসেছেন শুনে ক'দিন কেবল আমাকে বলচে আপনাকে ডাকতে ! তা আমার সময় হয় না— সতু হারাধনের নাম শুনেছিল তার মায়ের মুখে । ছেলেবেলায় দেখলেও সে কথা তার মনে ছিল না । লোকটা ওকে একটা ভাঙা কুঁড়েঘরে নিয়ে গেল। উঠোনে একটা কামরাঙা গাছে পাকা পাকা কামরাঙা বুলচে। ঘরের দাওয়ায় একটা মাছ-ধরা খুনি উপুড় করা আছে। ঘরের মধ্যে অন্ধকারে মেঝের ওপর বিছানায় একটা লোক শুয়ে ছিল। সত্যু ঘরে ঢুকতে লোকটা বিছানায় উঠে বসবার চেষ্টা করলে ! মুখের দিকে চোখ চেয়ে চেয়ে বল্লে—কে, খোকন ? আমার খোকন-সোনা ? আয়, কাছে আয়, ভালো করে দেখি—কোলে পিঠে মানুষ করেচি রে তোরে | লোকটা হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো। সতু তো অবাক । চুপ করেই রইল সে । লোকটা বল্পে –বাবা, তোমারে ডেকেচি কেন বলি। আমি মহাপাপ করেছিলাম । তোমার কাছে সেটা বলি। আমার সব গায়ে ঘা হয়েচে, তার ওপর জয় । খেতে পাইনে, কেউ একটু জল মুখে দেবার লোক নেই। তোমার জ্যাঠামশাই মরবার সময়ে তোমার বাবারে বলে, তাদের উঠোনে জবাতলায় পাঁচশো টাকা পোতা আছে। আমারে সে ট্যাক