পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Уе বিভূতি-রচনাবলী তিনি বলিলেন-কেউ তো আগ্রহ করে নিয়ে যাচ্চে না, কোথায় উঠবো কি জানি! —যদি কিছু মনে না করেন, আমার একখানা ঘর আছে দোতলায় । ভাড়াটে ঘর, একলাই থাকি । সেখানেই যদি আজ রাত্রে থাকেন— —তা বেশ । যাবো এখন । —আপনার খাওয়া-দাওয়ার তো কোনো-–মানে ওখানে সব আঁধি, মাছ-মাংস খাই । অবিশ্যি নিরামিষ যদি খান, তার ব্যবস্থা করে দেবো এখন । - ভগবান হাসিয়া বলিলেণ—আমার আবার ওসব কি ? যা দেবে, তাই খাবো । আমি কি বেষ্টিম গোসাই ? অপ্রতিভ স্বরে বলিলাম—আজ্ঞে, ক্ষমা করবেন । বৈষ্ণবেরা নিরামিষ ভোগ আপনাকে নিবেদন করে দেন কিনা তাই বলছিলাম— —আবার অন্তলোকে মাছ-মাংস দিয়ে ভোগ দেয়—মুরগি বলি দেয়, গরু মহিষ ছাগল কাটে —তাও খাই । আমার এক অবতারে আমি ভক্তের দেওয়া শূকরের মাংস খেয়ে রোগগ্রস্ত হয়ে নরদেহ ত্যাগ করি । —আজ্ঞে জানি, বুদ্ধ অবতারে । —ব্যাপার কি জানে, আদিম নীহারিকাটা ঘুরিয়ে দেবার পরে বিশ্বস্বষ্টি আপনা-আপনি হচ্ছে, আমার কোনো কাজ নেই। আজ কোটি কোটি বৎসর ধ’রে বেকার বসে আছি। ঘুরে ঘুরে বেড়াই, কোথায় কি হচ্চে দেখি । এখন আমি শুধু ভ্ৰষ্ট ও সাক্ষী মাত্র। জগতে দেখতে পাই আমায় কেউ চায় না, কেউ বোঝে ন!—এক একা থাকি । সৰ্ব্বত্রই আছি অথচ কেউ ফিরে চেয়েও দেখে না । কেউ মানে না আজকাল আর, বলে উনি তো বেকার । জগৎ আপনাআপনিই চলচে, ওঁর আবশ্যকতা বা কি ? কষ্ট হইল বেচারীর জন্য । এমন স্বরে কথা বলিলেন, তার উপর কেমন একটা মায়াও হইল । মানুষ বেকার হইত, চেষ্টা যত্ন করিয়া একটা কাজ যোগাড় করিয়া দিতাম। ভগবানের বেকার-সমস্তার সমাধান করা আমার সাধ্যায়ত্ত নয় । সামনেই চিৎপুর রোড। বড় ট্রাফিকের ভিড় । পিছনে ফিরিয়া বলিলাম—আস্কম, এই সামনেই 'আনন্দবাজার আপিস’—আপনার ফটোটা তাহলে— আহলাদের স্বরে বলিলেন—বেশ, চলো চলো—ওদের আমার পরিচয়টা দিয়ে দিও— না, বডড সরল ও ছেলেমামুষের মত । এত ছেলেমামুধি কেন ভগবানের মধ্যে ? আহা, কেন লোকে ওঁকে মানে না, গ্রাহ করে না, না মানিয়া মনে কষ্ট দেয় । p চিৎপুর রোড পার হইয়া ওপারের ফুটপাথে উঠিয়া পিছন ফিরিয়া তাহাকে ডাকিতে গিয়া দেখি, তিনি নাই । ভিড়ের মধ্যে কোথাও হারাইয়া গেলেন নাকি ? কলিকাতায় চলাফের। অভ্যাস নাই তো !