পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফুশল পাহাড়ী 83% —তা কি বলা যায় বাবু জলের কাও ৷ সাজ হতি পারে। চুনী নদীর জলে ঢল নেমেচে । রাণাঘাট টাউন ছাড়িয়ে দুধারে পাড়াগ। ভাত্রের নদী কুলে কুলে ভর্তি, বাবলা গাছে হলদে ফুল ফুটেচে, বুনো কচুর লম্বা লম্বা ফুল ফুটেচে জলের ধারে। আউশ ধান কাটচে চাষীরা নদীর দুধারে হলদে ক্ষেতে। সীতানাথ চুনী দিয়ে নৌকো করে জীবনে প্রথম এল এদিকে। মাঝে মাঝে গ্রামের ঘাটে মেয়েরা ঘড়ী ভরে জল নিয়ে ভিজে কাপড়ে ডাঙায় উঠচে, বাশবনের পথে অদৃপ্ত হয়ে যাচ্চে। ওর বেশ লাগছিল। কালকাস্বন্দির ফুলে নদীর ধার ছেয়ে গিয়েচে এক এক জায়গায় । কাশের ফুল বর্ষার হাওয়ায় দুলচে। সাদা কাশফুলে বনবনানী নদীতীর যেন শুভ্র বর্ণের হালি হাসচে! নীল আকাশ। গাং-চিল ছো মেরে মাছ ধরচে । জেলেরা দোয়াড়ী পাতচে জলে নেমে | प्रा ও জিগ্যেস করলে—কি মাছ হবে হ্যাগী ? —চিংড়ি । নৌকো কোথাকার ? —রাণাঘাটের। —কনে যাবে ? এবার সীতানাথকে কথা বলতে না দিয়ে মাঝি ধমক দিয়ে বল্পে—তোমার সে খোজে দরকার কি ? যেখানেই যাই । লোকটা অপ্রতিভের স্বরে বল্লে—ওমা, তা জিগ্যেস করলিও দোষ । ক্রমে বেলা পড়ে গেল। বাশবনে সোনার সড়কির মত নতুন বঁাশের কোড় নীল আকাশে ঠেলে উঠচে চারিদিকে । বনধুধুলের হলুদবরণ ফুলের পাপড়িতে পাপড়িতে প্রজাপতির নৃত্য । বনসিমের নীল ফুল ঝোপের মাথায় । অমুকুল স্রোতে তরতর বেগে নেীকে চলে যাচ্ছে । মাঝির জন্যে এক গা থেকে ওরা মুড়ি কিলে দিলে, নিজেরাও ছুটে খেয়ে নিলে । —হঁ্যা মাঝি, কুলবেড়ে আর কতদূর } —এখনো দূৰ্ব আছে। পানচিতের বাওড়ে গিয়ে পড়বো । তারপর কুলবেড়ে । —সন্দে হবে ? —সন্দের পর একদও রাত্তির-হবে। একটা গায়ের পাশে কি গাছে মাকাল লতার ফল পেকে টুকটুক করে স্থলচে । হঠাৎ ওর মনটা কেমন করে উঠলো। সেবার ওদের গ্রামে পুরনো ডুমুর্গাছে মাকাল ফল পেকে অমনিধারা লাল টুকটুক করছিল। তখন পিটু আরো ছোট। ও বল্লে—ওই দ্যাখ খোকা । ইবু (লেবু) — খোকা বল্পে—ইবু দিবি বাবা ? —দাড়া পাড়ি । —পাড়ো। আমি কাল ইকু দিয়ে ভাত খাবো।