পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

89e বিভূতি-রচনাবলী সেখানকার সকলেই বল্পে ধোপার বাড়ী কাপড় দেবেন বলে তিনি সকাল সকাল উঠে চলে গিয়েছিলেন । অনেক দিন কেটে গেল তারপর । রাঙা খুড়ীমা আরো কিছুদিন পরে বাপের বাড়ী চলে গেলেন। বছর-দুই পরে তার এক ভাইপে এসে এখানকার বিষয়-আশয় বিক্ৰী করে চলে গেল, তার মুখে শুনলাম রাঙা খুড়ীমার মৃত্যু হয়েচে । জিনিসটা মিটে গেল । আমাদের গ্রামের মধ্যে হরিকাকার ইতিহাস একটা মনোহর কাহিনীতে পৰ্য্যবসিত হয়ে গেল। ওদের ভিটেতে ঘন জঙ্গল হয়ে গেল, দিনমানে সেখানে নাকি বাঘ লুকিয়ে থাকে, শুধু দাড়িয়ে রইল সিংহদরজাটা—কাঠ থামালের মাথায় দুটাে বড় জিউলি গাছ আর একটা অশ্বখ গাছ নিয়ে । কাঠের কবাট দুটোও কারা খুলে নিয়ে গেল কিছুকাল পরে। আমি কলকাতায় চাকরি করি, সস্তা ভাড়ায় দেশভ্রমণ করতে বেরিয়েচি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে । সারনাথ যাবার পথে পাড়েপুর নেমেচি আমরা, সেখানকার বিখ্যাত ক্ষীরের পানতুয়া খাবার জন্যে। রামলীলা উৎসবের জন্যে পাড়েপুর চৌমাথার মোড়ে একটা উচু মাচা বেঁধেচে, সেটা রঙিন কাগজের মালায় সাজাবে, লোকজনও অনেক জমেচে তায় চারিধারে । আমাদের টাঙাওয়ালা দুজন বল্লে—বাবুজি, টাঙা এগিয়ে গাছতলায় রাখি । —কেন ? —ইহাপর বহুৎ ভিড় জমতা | লেকিন দেরি মাৎ কিজিয়ে আপলোগ, সাম হে যায়গা— আধঘণ্টা পরে যখন পেট পুরে সস্তা ক্ষীরের পানতুয়া খেয়ে আমরা সাতজন বন্ধু টাঙার সন্ধান করলাম, টাঙা আর নেই! সে কি, টাঙা গেল কোথায় ? হরিধন বল্পে—এগিয়ে দেখা যাক আরো । গাছতলায় থাকবে বলেছিল—এই তো গাছতলা । দেখি কতদূর গেল । রশি-দুই পথ এগিয়ে বাকের মাথায় টাঙা দুখানা দাড়িয়ে আছে দেখা গেল। সেইখানে গাছতলায় এক সাধুর আসনের চারপাশে অনেকগুলি লোক জুটেচে, টাঙাওয়ালা দুজনও সেখানে জমেচে ] d আমরা বকবিকি করতে একজন টাঙাওয়ালা বল্লে—বাবুজি, বাঙালী সাধু হায়! সবাই কৌতুহলী হয়ে উঠলাম। কোথায়, ওই সাধু নাকি ? বাঙালী ? এইভাবে আবার হরিকাকার দেখা পেলাম। আমি চিনি নি, তিনি আমার দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে বজেন—বিঃ দাদার ছেলে অমল না ? আমি অবাক । বন্ধুরা অবাক । আমি কখনই এই অপরিচিত পরিবেশে এই জটাজুটধারী দাড়িওয়াল বৃদ্ধ সাধুকে আমাদের সেই হরিকাকা বলে চিনে নিতে পারতাম না, দীর্ঘ তেরো