পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী 8፪ዓ সতীশের মা কিন্তু আজও বেঁচে আছেন। কোন অমুখ নেই, দিব্যি শরীর । মুখুজ্যেবাড়ী বাসন মেজে আর ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের রেখে সেখানে দুবেলা খেতে পান । ঝড়ের রাতে যাচ্ছিলাম রাজস্থান বই আনতে ভূপেনদের বাড়ী। পড়ি নীচের ক্লাসে, বয়েস বারো বছর। বই পড়ার বডড ঝোক । পাড়াগ জায়গা, বই তেমন মেলে না । আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে— নাম তার ভূপেন্দ্রনাথ চক্ৰবৰ্ত্তা, বাড়ী নদীর ওপারে স্বথপুকুর ঘাটবাওড়—একদিন বল্পে তার বাড়ী দু’তিনখানা বই আছে । নাম কি ? ভেবে বল্পে, একখানার নাম রাজস্থান । মোটা বই, না সরু ? মোটা, খুব মোট । আর যাবি কোথায় ! রাজস্থান বইয়ের নাম আমার শোনা আছে। বই দিবি তো ? ই দেবে, যদি তার বাড়ী আমি যাই । –কিন্তু তাহোলে সেদিন বাড়ী ফিরবো কি করে ? —কেন, সেদিন আমাদের বাড়ীতে থাকবে । এই শর্তে রাজি হয়ে বই আনতে যাচ্ছি ভূপেনদের বাড়ী। নদীর ওপারে, আমাদের স্কুল থেকে পাচ মাইল পথ। সময়টা বোধ হয় পূজোর পর। দিন ছোট, নদী পার হোতে না হোতে বেলা গেল । সঙ্গে সঙ্গে নামলো বৃষ্টি । মেঘ অনেকক্ষণ থেকে জমে ছিল আকাশে । দৌড়ে গিয়ে একটা আমগাছের তলায় দাড়ালাম । ছাতি আনিনি সঙ্গে । এটা বর্ষাকাল নয়, ওবেলা চমৎকার রোদ ছিল । সন্ধ্যার সময় বৃষ্টি নামবার কোনো সম্ভাবনা দেখা যায়নি। আমতলায় খানিকটা দাড়িয়ে বুঝলাম আমগাছের শাখাপত্র বৃষ্টির জল থেকে বাচাতে পারবে না। বাড়ীম্বর আছে কিনা দেখবার আগ্রহে এদিক-ওদিক চেয়ে দেখি কিছু দূরে আমবাগানের ফঁাকে একটা পুরোনো কোঠাবাড়ী যেন বৃষ্টির মধ্যে আবছায়া দেখা যাচ্ছে। এক দৌড় দিলাম বাড়ীটা লক্ষ্য করে এবং সৰ্ব্বাঙ্গ ভিজে জুবড়ি হয়ে হুড়মুড় করে বারান্দার দোর ঠেলে বাড়ীর মধ্যে ঢুকে পড়লুম। বাড়ী কাদের, কে আছে না আছে সেখানে, এদিকে আমার কোনো লক্ষ্যই নেই । কে যেন একজন বারান্দায় ও-কোণ থেকে রুক্ষস্বরে বলে উঠলো—কে হে ? চমকে চেয়ে দেখি একজন বুড়ে মাস্থ্য একটা মাছরের ওপর ঝুকে বসে কি করছিল, মুখ ঈষৎ তুলে আমার দিকে চেয়ে প্রশ্নটা করছে। অপ্রতিভের স্বরে বল্লাম—আমি একজন স্কুলের ছেলে। স্বথপুকুর যাবো। —মুখপুকুর যাবে তো এখানে কি ? —জাজে, বিষ্টটা এল কিনা, ওই আমতলায় দাড়িয়ে ভিজছিলাম।