পাতা:গল্পস্বল্প.djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( ১৯ )

যাইবার সময় পথে একজন সন্ন্যাসী তাঁহাকে ম্লান দেখিয়া তাহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। সবিশেষ শুনিয়া সস্নেহে বলিলেন “বৎস, রক্তপাত করিয়া, কিম্বা যশের কামনা-পরবশ হইয়া পৃথিবীজয়ী নামের আশা করিও না। তাহাতে সে প্রদীপ নিভিবে না। যদি আত্মজয় করিতে পার তাহা হইলেই তুমি যথার্থ পৃথিবী জয়ী হইবে ও তাহা হইলেই তুমি সেই দেবরত্নের অধিকারী।”

 সন্ন্যাসীর কথায় মহারাজের চৈতন্য হইল। তিনি মন্দিরে না গিয়া পথ হইতে বাটী ফিরিয়া আসিলেন। অন্যায়রূপে যে সকল রাজত্ব কাড়িয়া লইয়াছিলেন তাহা ফিরাইয়া দিলেন, নিজের দুষ্প্রবৃত্তি সকল দমন করিয়া নিঃস্বার্থ ভাবে পরোপকারে কৃতসঙ্কল্প হইলেন। আন্তরিক প্রার্থনায় ঈশ্বর তাঁহার সহায় হইলেন— ক্রমে লোভ, ঈর্ষা, অহঙ্কার সকলি তাঁহাকে পরিত্যাগ করিল— তিনি ঈশ্বরে আত্ম সমর্পণ করিতে সমর্থ হইলেন। তখন তাঁহার হস্তের কালী মুছিয়া গেল, কিন্তু তখন আর কোন রত্ন লাভে তাঁহার বাসনা রহিল না, তিনি বাসনাহীন হৃদয়ে পুরোহিতকে ধন্যবাদ দিবার নিমিত্ত সেই মন্দিরে গিয়া দেখিলেন, প্রদীপ নিভিয়া গিয়াছে। পুরোহিত বলিলেন—“তুমি যে রত্ন লইতে আসিয়াছ তাহা ইতিপূর্ব্বেই তোমার হইয়াছে—এই দেখ দীপ নির্ব্বাপিত। এখন তুমি কেবল মাত্র পৃথিবীজয়ী নহ—ত্রৈলোক্য জয়ী।”

বালকবালিকাগণ, তোমরা কি বুঝিয়াছ এই গল্পটির গূঢ়ার্থ কি? দুষ্প্রবৃত্তি মনুষ্যহৃদয়ে সর্পস্বরূপ। মনুষ্যের গুণজ্যোতি হরণ করিয়া সে নিজে প্রতিভাত হয় কিন্তু মনুষ্যকে নিস্তেজ করিয়া রাখে। সেই সর্পের ধ্বংস দ্বারাই মনুষ্য তাহার মনুষ্যত্ব ফিরিয়া পায়।