পাতা:গল্পস্বল্প.djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( ২২ )

গ্রামে এমন লোক নাই যে সাজ সজ্জা না করিয়াছে, একখানি নূতন কাপড় না পরিয়াছে। গাঁয়ের বৌঝিগণ—যাহার যে ভাল কাপড়খানি, যে গহনাগুলি আছে তাহা পরিয়া, আলতা পায়ে দিয়া, ঘোমটা টানিয়া বৃদ্ধাদিগের সঙ্গে সঙ্গে ঠাকরুণ প্রণামে চলিয়াছে। বালক বালিকাগণ নূতন পরিচ্ছদে সাজিয়া মস্ত লোকের চালে—গম্ভীর ভাবে চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিতে করিতে, হাস্যপূর্ণ উল্লাসিত উৎসাহিত যুবকমণ্ডলী এবং হরিনামের মালা হস্ত, প্রীতি গদ্গদ চিত্ত বৃদ্ধগণের সহিত একত্রে পূজাগৃহে গমন করিতেছে। বিশ্বজননীর আগমনে আজ গ্রাম কৃতার্থ, পবিত্র, শোভাময়, আনন্দবিভাসিত।

 এইরূপে প্রাতঃকাল কাটিয়া গেল, ক্রমে দ্বিপ্রহরের বলিদানের সময় আসিয়া পড়িল,—পূজার দালানের সম্মুখের উঠানে বলিদানের আয়োজন হইয়াছে। গ্রামের যত ছেলেরা মনভরা আনন্দ, মুখভরা হাসি লইয়া একযুগ আগে হইতে এখানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। কেবল দীননাথ এখানে নাই, দীননাথ ঠাকরুণ প্রণাম করিয়া সেই যে সকালে ঘরে গিয়াছে সেই অবধি আর তাহার দেখা নাই। দুই প্রহর অতীত হইয়া যায় তথাপি দীননাথকে গৃহে দেখিয়া তাহার মা আশ্চর্য্য হইয়া বলিলেন— “হাঁ রে দীনু, বেলা দুপর হইল এখনি বলিদান হইবে,—সব ছেলেরা এতক্ষণ পূজা বাড়ীতে, আর তুই যে এখনো ঘরে?”

 দীননাথ বলিল—“না মা এ বেলা আমি আর পূজা-বাড়ীতে যাইব না। হরি, কানাই, শ্যাম, কি কেহ আসিলে, আমি বাড়ী আছি—একথা তুমি কাহাকেও বলিও না। বলিলে আর তাহাদের হাত ছাড়াইতে পারিব না।”