পাতা:গল্পস্বল্প.djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( ২৭ )

 এই ব্যঙ্গোক্তি শুনিলেই দীনর গা জ্বলিয়া যাইত। যদিই বা সে পাখী মারিতে একটু ইতস্ততঃ করিত, কিন্তু এই মর্ম্মান্তিক উপহাস বাক্যে আর কথাটি না কহিয়া উত্তেজিত মনে পাখীটিকে লক্ষ করিয়া ঢিল ছুঁড়িল। বৃন্তচ্যুত কুসুমের ন্যায় পাখীটী ভূমিতে পড়িয়া ছট ফট করিতে লাগিল, তাহার আহত স্থান হইতে দুই এক বিন্দু শোণিতও মাটিতে পড়িল।

 প্রাণীহত্যা-কার্য্যে দীনর এই প্রথম হাতে খড়ি, ইহার পূর্ব্বে সে নিজে রক্তপাত করিয়া তাহা কখনও দেখে নাই। দীনর প্রাণের ভিতর হইতে অশ্রুজল উথলিয়া উঠিতে লাগিল। কিন্তু পাছে অন্যান্য বালকেরা তাহা বুঝিতে পারে, এই ভয়ে প্রাণপণে তাহা সম্বরণ করিয়া লইল। বালকেরা পাখীটি হস্তগত হইয়াছে দেখিয়া আহ্লাদে চীৎকার করিয়া উঠিল, এবং দীনকে প্রশংসা করিতে করিতে অন্য পাখীর চেষ্টায় ঘুরিতে লাগিল।

 ইহার পর চারি পাঁচ বৎসর চলিয়া গিয়াছে। এখন বনগ্রামের এমন পরিবর্ত্তন ঘটিয়াছে যে এখন আর উহাকে সেই গ্রাম বলিয়াই চেনা যায় না। পূর্ব্বেকার ভদ্রপল্লী ও গ্রাম্য কুটীরের স্থলে এখন নুতন বড়মানুষদিগের এবং নীলকর সাহেবের বড় বড় বাড়ী ধপধপ করিতেছে। তখনকার অনেক লোক এখন গ্রাম ত্যাগ করিয়া গিয়াছে, বালকমণ্ডলী এখন যুবা হইয়া উঠিয়াছে। কত নূতন লোকের আবির্ভাব, কত পুরাতন লোকের তিরোভাব হইয়াছে।

আজ আবার সেই সপ্তমী পূজা। কিন্তু চাটুয্যেদের বাড়ী এখন আর পূজা হয় না, মকদ্দমায় তাহারা সর্ব্বস্বান্ত হইয়া গিয়াছে।