পাতা:গল্পস্বল্প.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( ২৮ )

নীলকরের দাওয়ান নবীন ঘোষের বাড়ী আজ পূজার বড় ধূম। কিন্তু সে পূজায় আবাল বৃদ্ধ বনিতা যত সুখী হইত,এ পূজায় যেন তাহাদের তত সুখ হয় না। উঠানে বালক ও যুবকেরা দাঁড়াইয়া আছে, এখনই বলিদান হইবে; এই সকল আয়োজন দেখিয়া যুবকদিগের মনে সেই ছেলেবেলার কথা জাগিয়া উঠিতেছে। চাটুয্যে মহাশয় কেমন ভাল লোক ছিলেন, তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র কেমন সকলের সহিত প্রিয়-সম্ভাষণ পূর্ব্বক কথাবার্তা কহিতেন। অমন বনিয়েদি ঘর—একেবারে উৎসন্ন গেল! আর এই নবীন ঘোষ দুদিন আগে লাঙ্গল ধরিতে ধরিতে যাহার প্রাণ গিয়াছে—তিনি আজ বাবু হইয়া কাহারও প্রতি চাহিয়া একটি কথা কহেন না!

 পূর্ব্ববৎ অনুষ্ঠান শেষ হইলে ছাগ শিশু হাড়িকাঠে বদ্ধ হইল, কামার খড়্গ উঠাইতে উদ্যত হইয়াছে, এমন সময় একটা কোলাহল পড়িয়া গেল। পুরোহিত বলিলেন, “নব কামার, তুমি থাম—থাম”।

 হারুর মা ছুটিয়া আসিয়া বলিল, “ঠাকুরমহাশয়, নব কামার, যেন এবার পাঁটা বলি না দেয়, কর্ত্তামা রাগ করিতেছেন। আর বারে সে এক কোপে কাটতে পারে নাই—সেই অমঙ্গলে আমাদের দাদাবাবুর খোকাটি মারা গেল—এবার যেন নব খাঁড়া হাতে না করে।” অবিলম্বে রামার মা শ্যামার মা দৌড়িয়া আসিয়া ঐ একই কথা বলিতে লাগিল। স্বয়ং বাড়ীর কর্ত্তা নবীন ঘোষ দৌড়িয়া আসিয়া বলিলেন—“ঠাকুরমহাশয় নব কামারকে খাঁড়া ছুঁইতে দিবেন না—তাহা হইলে মা এবার রক্ষা রাখিবেন না”।

 উঠানে একটা গোলমাল বাধিয়া গেল,সকলে বলিয়া উঠিল— “কে তবে বলিদান করিবে? আর একজন কামার ডাকিয়া আন”।