পাতা:গল্পস্বল্প.djvu/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( 8৩ )

কাহারও অধিকার নাই, কিছু না কহিয়া না বলিয়া তাড়াতাড়ি আসিয়াই লক্ষ্মী কুসুমকে এক চড় মারল, কিন্তু চড় মারিয়া হাত সরাইয়া লইবার সময় সেই ফুলগাছের পাতার কাঁটায় তাহার হাত ছড়িয়া গেল, ছড়িয়া রক্ত পড়িতে লাগিল।

 কুসুমের প্রাণে বড় বেদনা লাগিল ও লক্ষ্মী যে তাহাকে মারিয়াছে, লক্ষ্মী যে তাহার প্রতি অত্যাচার করে সে তাহা ভুলিয়া গেল। কাঁদ কাঁদ চোখে কুসুম লক্ষ্মীকে ধরিয়া পুষ্করিণীর তীরে আনিয়া বসাইল, তাহার পর আপনার আঁচল ভিজাইয়া তাহার হাতে বার বার জল দিতে লাগিল।

 লক্ষ্মী কাহারাে নিকট এরূপ প্রতিশােধ পায় নাই, লজ্জায় অনুতাপে সে মরিয়া গেল। কুসুমের ব্যবহারে তাহার হৃদয়ের একটি লুক্কায়িত তারে আঘাত লাগিল, এতদিন অন্য কেহ সে তার স্পর্শ করিতে পারে নাই। সে যেন আজ সহসা দিব্য জ্ঞান লাভ করিয়া কিয়ৎক্ষণ পরে বলিল—“কুসুম, আজ তুমি আমাকে যাহা শিক্ষা দিলে এ পর্য্যন্ত তাহা আমাকে কেহ শিখায় নাই। তােমার এ উপকার আমি জন্মে ভুলিব না; এই ব্যাপার মনে করিয়া আমি এখন হইতে তােমার মত হইতে চেষ্টা করিব।”

 সেই পর্য্যন্ত সত্যই লক্ষ্মীর স্বভাব একেবারে পরিবর্ত্তিত হইয়া গেল। আর লক্ষ্মীকে কাহারাে প্রতি অত্যাচার করিতে দেখা যায় না। যখনি অভ্যাস বশতঃ লক্ষ্মী কাহাকেও মারিতে যায়, অমনি সেই দিনকার ঘটনাটি মনে পড়ে, অমনি তাহার মনে অনুতাপ জাগিয়া উঠে, এবং তৎক্ষণাৎ অন্যায় কর্ম্ম হইতে বিরত হইয়া কুসুমের মত ভাল হইতে সংকল্প করে।

 এইরূপে ক্রমে লক্ষ্মী যথার্থই লক্ষ্মী হইয়া দাঁড়াইল।