পাতা:গল্পস্বল্প.djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( ৫০ )

দেখাইয়া বলিল, “মহারাজ, তুমি এই রত্ন গ্রহণ কর—ইহা গ্রহণ করিলে তোমার অসুখের কারণ বিন্দুমাত্র থাকিবে না।” কিন্তু রাজা সে সাররত্নের প্রকৃত মূল্য কিছুই বুঝিতে পারিলেন না, সুতরাং পরীর দান অগ্রাহ্য করিলেন। পরী তখন হতাশ হইয়া ক্ষুণ্ণচিত্তে-ভাগ্য-দেবীর নিকট যাত্রা করিল। যাইতে যাইতে পথে দেখিল, একজন গৃহস্থ সমস্ত দিনের পরিশ্রমের পর স্ত্রী পুত্র কন্যাকে লইয়া আনন্দ উপভোগ করিতেছে এবং তাহার এই সুখের জন্য মনে মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতেছে। পরী তাহার নিকট গিয়া আপনার অমূল্য রত্নের এক ক্ষুদ্র ভাগ তাহাকে দিতে চাহিল। গৃহস্থ অন্যের ন্যায় তাহা লইতে অস্বীকৃত না হইয়া কৃতজ্ঞচিত্তে তাহা গ্রহণ করিল। পরী তখন আবার তাহার গন্তব্য পথে যাত্রা করিল— তাহার দানে গৃহস্থ প্রকৃত সুখী হয় কিনা তাহা দেখিবার জন্য সে আর অপেক্ষা করিল না। কিছুতেই যে কাহাকেও সুখী করা যায় এ আশা আর তখন তাহার ছিল না। পরী ভাগ্য-দেবীর নিকট পৌঁছিয়া বলিল, “মানুষকে সুখী করা যে কত কঠিন, তাহা আমি এখন বেশ বুঝিয়াছি—ইহা না বুঝিয়াই আগে আমি তোমাকে দোষী করিতেছিলাম, সে জন্য আমাকে ক্ষমা কর। রাজা, ধনী, কৃষক, ও গৃহস্থ—এই চারি জনের একজনকেও যখন সুখী করিতেপারিলাম না, তখন সমস্ত পৃথিবীকে সুখী করিব কেমন করিয়া?” পরীর এই কথায় ভাগ্য-দেবী তাহার দুঃখে দুঃখিত হইয়া বলিলেন,সকলকে তুমি সুখী করিতে পারি নাই সত্য, কিন্তু কেহই যে তোমার দানে সুখী হয় নাই তাহা নহে। রাজা, ধনী, চাষা, প্রথমে তোমার দানে সুখী হইয়াছিল; কিন্তু সে সুখ প্রকৃত সুখ নহে, তাই তাহা স্থায়ী হইলনা। কিন্তু ঐ দেখ, একজনকে তুমি প্রকৃত সুখ দিয়াছ। তোমার অনুগ্রহে ঐ গৃহস্থের এত সুখ হইয়াছে যে জগতে তাহার ন্যায় সুখী ব্যক্তি অতি বিরল।