পাতা:বিশ্বকোষ ত্রয়োদশ খণ্ড.djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্ৰহ্মন [ »8१ শ্বেতকেতুর এক্ষোপদেশের স্থলে ছান্দোগ্য উপনিষদের একটা জাখ্যায়িকার সংক্ষিপ্ত তাৎপৰ্য্য এই স্থলে প্রদর্শিত ছইল। আরুণি শ্বেতকেতুনামক নিজপুত্রকে কছিলেন যে, হে খেতকেতে,গুরুকুলে বাইয়া ব্ৰহ্মচর্য্য আচরণ কর। ষে হেতু আমাদের কুলজাত কোন ব্যক্তি অধ্যয়ন না করিয়া ব্ৰহ্মবন্ধু হয় না। দ্বাদশবর্ষীয় বালক শ্বেতকেতু পিতার উপদেশানুসারে শুরুকুলে যাইয় অধ্যয়ন সমাপন করিয়া চতুৰ্ব্বিংশতিবর্ষ সময়ে পিতৃগৃহে সমাগত হইলেন এবং তিনি নিজে আপলাকে অসামান্ত বিদ্বান বিবেচনা করিতে লাগিলেন। মুতরাং কাহারও সহিত বাক্যালাপ পৰ্য্যন্ত করিতেন না। পুত্রের এইরূপ অবস্থা ও অতিমানের প্রতি লক্ষী করিয়া আরুণি বলিলেন, হে শ্বেতকেতো! তুমি অমৃচানমানী অর্থাৎ নিজেকে অতিশয় বিদ্বান বিবেচনা করিতেছ এবং কাহারও সহিত বাক্যালাপ করিতেছ না। ভাল, বল দেখি, তুমি গুরুর নিকট এমন কোন প্রশ্ন করিয়াছিলে, যাহার উত্তর যথাবৎ অবগত হইলে আশ্রত বিষয় শ্রুত, অমত বিষয় মত এবং অবিজ্ঞাত বিষয় বিজ্ঞাত হওয়া হয়। শ্বেতকেতু ইহা অসম্ভব বিবেচনা করিয়া কহিলেন, হে ভগবন! ইহা কিরূপে সম্ভব হইতে পারে ? আরুণি বলিলেন, হে প্রিয়দর্শন ! যেমন একটা মৃৎপিণ্ড বিজ্ঞাত হইলে সমস্ত মৃন্ময় অর্থাং মুদ্ধিকার বিজ্ঞাত হয়, একটী লৌহমণি বিজ্ঞাত হইলে সমস্ত লৌহবিকার জ্ঞাত হয়, একটা নখনিকুন্তন (নরুণ ) বিজ্ঞাত হইলে সমস্ত কাঞ্চর্ণয়স অর্থাৎ কৃষ্ণলোঁহের বিকার বিজ্ঞাত হয়—কেন না মৃত্তিক, লৌহ ও কৃষ্ণায়ুস ইহাই সত্য, বিকার কেবল বাক্য দ্বারাই আরদ্ধ হয়, অর্থাৎ মৃত্তিকাদির সংস্থান বিশেষ অনুসারে ঘটপটাদি নাম হয়। বাস্তবিক কিন্তু মৃত্তিকাদির অতিরিক্ত বিকার নাই—সেইরূপে এক বিজ্ঞানে সৰ্ব্ববিজ্ঞান সম্ভবপর হইতে পারে। উপাদান মাত্রই সত্য, বিকার মিথ্যা । সুতরাং গুগভের উপাদান জানিতে পারিলে সমস্তই জানিতে পারা বার। ইহাতে শ্বেতকেতু বলিলেন, গুরু নিশ্চয়ই ইহা অবগত নহেন, অবগত থাকিলে অবশুই আমাকে বলিতেন। হে ভগবন! আপনিই আমাকে উপদেশ করুন। শ্বেতকেতুর এইরূপ প্রাধনানুসারে আরুণি তাহাকে জগৎকারণের উপদেশ দেন। এস্থলে এক বিজ্ঞানে সৰ্ব্ববিজ্ঞান প্রতিজ্ঞা করিয়া তাহার উপপাদনের জন্য জগৎকারণের উপদেশ প্রদত্ত হয়। বিকার বস্তুগত্যা সত্য হইলে কখনই এক বিজ্ঞানে সৰ্ব্ববিজ্ঞান হইতে পারে না। উপাদান বিজ্ঞাত হইলেও উপাদেয় অর্থাৎ তাহার বিকার জবিজ্ঞাত থাকিতে পারে। অতএব প্রতিপন্ন হইতেছে বে, উপাদান ভিন্ন বিকারের বাস্তবিক অস্তিত্ব নাই । | ुछाम & দৃষ্টাত্ত-স্থলে—“মৃত্তিক্ষেত্যেব সত্যং,লোহমিতোব সত্যং কৃষ্ণায়সমিত্যেব সত্যং" (শ্রুতি) অর্থাৎ মৃত্তিকাই সত্য, লৌহৰ লতা, কৃষ্ণলেীহই সত্য, এইরূপে উপাদানের সত্যতা অবধারণ করাভে বিকায়ের অসত্যতা স্পষ্ট প্রতীত হইতেছে। যাহ। অসত্য—তাহা মিথ্যা, ইহা বলাই বাহুল্য ; উপদেশ দিবার সময়ে আরণি পুনঃ পুনঃ বলিয়াছেন ।

  • এতদাত্ম্যমিদং সৰ্ব্বং তৎ সত্যং স আত্মা তত্বমসি

খেতকেতে। ” সদেব সেমোদমগ্র আসীদেকমেবাদ্বিতীয়মৃ” সেই সৎ বস্তুই একমাত্র সত্য, তিনিই ব্ৰহ্ম এবং তিনিই তুমি । তুমিই সমস্ত, একমাত্র এবং অদ্বিতীয়। এই শ্রুতির তাৎ পর্য্যের বিষয় পূৰ্ব্বেই উল্লেখ করিয়াছি। জীবাত্মা ও পরমাত্ম বা ত্রহ্মের ঐক্যই বেদামুশাস্ত্রে প্রতিপাদিত হইয়াছে। সাধারণতঃ জীবাত্মা ব্রহ্মভিন্নরূপে প্রতীয়মান হইলেও বেদাস্তশাস্ত্র বুঝাইয়া দেয় যে, জীবাত্ম। বাস্তবিক ব্রহ্মভিন্ন নহে, ব্রহ্মস্বরূপ । বেদাস্তাদি দর্শনশাস্ত্রের প্রয়োজন মুক্তি । মুক্তি কি না অজ্ঞান বা অবিস্তার নিবৃত্ত্বি এবং স্বস্বরূপ আনন্দপ্রাপ্তি। এই মুক্তি জীবব্রহ্মের ঐক্যসাক্ষাৎকার-সাধ্য। অর্থাৎ জীব ও ত্রহ্মের ঐক্য সাক্ষাৎকার হইলেই মুক্তি হয়। আপত্তি হইতে পারে যে, সংসার দশাতে ও স্বস্বরূপ আনন্দের অন্যথাভাব নাই। কেন না বস্তুস্বরূপের অনুগাভাব অসম্ভব। সুতরাং স্বস্বরূপ আনন্দ নিতাপ্রাপ্ত বলিয়া তাহার প্রাপ্তি হইতে পারে না। অপ্রাপ্ত বস্তুর প্রাপি হষ্টতে পারে, যাহা নিত্যপ্রাপ্ত, তাহার আর প্রাপ্তি হষ্টবে কি ? স্বস্বরূপ আনন্দের প্রাপ্তি হইতে না পারিলে জীব ত্রহ্মের ঐক্য সাক্ষাৎকার ও তাহার সাধনও হইতে পারে না। এতদ্রূত্বরে বক্তব্য এই যে, নিত্যপ্রাপ্ত বস্তুও মিথ্যাজ্ঞান বা ভ্রমবশতঃ অপ্রাপ্ত বলিয়া বোধ হয়। ঐ ভ্রম অপনীত হইলে তাহা প্রাপ্ত রূপে প্রতীয়মান হইয়া থাকে। কণ্ঠগত স্বর্ণহার নিত্যপ্রাপ হইলেও বিস্মরণ হেতু অপ্রাপ্ত এবং তদপগতে উহাই আবার প্রাপ্ত বলিয়া প্রতীত হয়। সেইরূপ আনন্দ ব্রহ্মের স্বরূপ হইলে ও সংসারদশায় অবিদ্যাদোষে তাহ সম্যক্ প্রতিভাত হয় না, সুতরাং অপ্রাপ্ত বলিয়া বোধ হয়। বিদ্যা দ্বারা অবিদ্যা নিবৃত্তি হইলে তাঁহাই সম্যকৃরূপে প্রতিভাত হয়, বলিয়া তখন উহ! প্রাপ্ত হইলরূপে বিবেচিত হয়। সংসারাবস্থায় অবিদ্যাদোষে ব্রহ্মের আনঙ্গন্ধপত্ব বিশেয়রূপে প্রতীয়মান হয় না বটে, কিন্তু সামান্তরপে প্রতীয়মান হইয় থাকে। যেমন কোন গৃছে কতকগুলি বালক বেদধ্যয়ন করিলে গৃহাবরস্থিত পিতা সামান্যরূপে জানিতে পারেন