পাতা:বিশ্বকোষ একাদশ খণ্ড.djvu/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাতঞ্জলদর্শন তাহার অল্পমাত্রও শোক হইবে না । সে অনায়াসে ও নিরুদ্বেগে সুখাসীন হইয়া সমাধি অনুভব করিতে পরিবে, তৎপক্ষে কোন সন্দুে নাই। মূল অর্থাৎ কৰ্ম্মাশয় থাকিলেই তাহার বিপাক অর্থাৎ ফলস্বরূপ জাতি, জন্ম, মরণ, জীবন ও ভোগ করিতেই হইবে । ইহাতে কিছুমাত্র সংশয় নাই। এই জাতি প্রভৃতির ফল অtহলদি ও পরিতাপ । কেননা ইহা পুণ্য ও পাপরপ কারণ হইতে উৎপন্ন হয়। এইজন্ত ইহা পরিণামে দুঃখ, বর্তমানে অর্থাৎ ভোগ কালে দুঃখ এবং পশ্চাৎ বা স্মরণকালেও দুঃখ । যোগিগণ সাংসারিক সুখ দুঃখমিলিত বলিয়। তাছাকে দুঃখপদবাচ্য বলিয়া নির্দেশ করিয়া থাকেন। যোগীদিগের মনোবিকার নষ্ট হইলেই তাহদের সুখ, ঈশ্বরে ও আত্মতত্বে চিত্ত স্থির হইলেই মুখ, মনোলয় হইলে তাহাধের আরও মুখ। সে মুখ দৃপ্ত ভোগে নাই বলিয়াই তাহার দৃপ্ত সমুদায়কে দুঃখ মধ্যে নিক্ষেপ করেন । ইহাদের মতে অনাগত অর্থাৎ ভবিষ্যৎ স্থঃখই হেয় । যাহাতে ভবিষ্যতে আর দুঃখ না হয়, তাহ করাই কর্তব্য । * যোগী অনাগত অর্থাৎ ভবিষ্যৎ দুঃখের নিবারণ চেষ্টা করিবেন। দ্রষ্টা আস্থা ও দৃপ্ত অন্তঃকরণ এই দুয়ের সংযোগ থাকাই দুঃখের কারণ । অন্তঃকরণের (বুদ্ধির ) সহিত গুরুষের সংযোগ থাকাতেই হুঃখাদি উৎপন্ন হইয়া থাকে। বুদ্ধির উপর পুরুষের বা আত্মার অভেদ ভ্রান্তি বা আত্মসম্পর্ক কল্পিত হইয়াছে বলিয়াই পুরুষ সুখদুঃখাদি বিকারে বিকৃতপ্রায় হইয়াছেন । বস্তুতঃ তাহার মুগদুঃখাদি কিছুই নাই। প্রকৃতি ও তদ্যুৎপন্ন যে কিছু ভূতভৌতিক, সে সমস্তই পুরুষের ভোগের ও অপবর্গের নিমিত্ত হইয়াছে, ইহার অবিবেকীর ভোগ এবং বিবেকীর মোক্ষ উৎপাদন করিয়৷ পাকে ভূস্বভাব লৌহ যেমন সম্পূর্ণরূপে ইচ্ছাবিহীন ও চলৎশক্তিরহিত হইয়াও চুম্বক সন্নিধানে প্রচলিত ও সক্রিয় হয়, তেমনি প্রকৃতিও চিদাত্মার সন্নিধানবশতঃ মুখদু:খাদি নানা আকারে পরিণত হন । কিন্তু যিনি যোগাদি দ্বারা ইহা প্রকৃতির ধৰ্ম্ম বলিয়া স্থির করিতে পারিয়াছেন, তাহার আর কোন দুঃখাদি নাই । এইরূপ সংযোগের মূল কারণ অবিদ্যা, অর্থাৎ ভ্রাত্ত্বিজ্ঞান ব৷ ভ্রাস্তিজ্ঞানের সংস্কার । যোগtভ্যাস দ্বার। সেই অবিদ্যা যদি বিনষ্ট হয়, তাহ হইলে সেই পুরুষের সহিত প্রকৃতি সংযোগ বা ভোক্ত ভোগ্যভাব থাকে না। সুতরাং পুরুষ তখন মুক্ত হন। জড় সম্বন্ধবর্জিত হইয়াও তিনি তখন স্বীয় চিদম্বন থভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকেন। যোগী যে কোন কাৰ্য্য করিবেন, [ ১৯২ ] পাতঞ্জলদর্শন র্তাহার যেন এইরূপ জ্ঞান থাকে যে, আমার যেন অবিদ্যানাশ হইয়া বিবেকখ্যাতি হয়। যোগাঞ্জামুষ্ঠান দ্বারা চিত্ত্বের মলিন"। নষ্ট হইলে জ্ঞানের দীপ্তি হয় এবং সেই, দীপ্তি বা সেই প্রকাশের শেষসীমা বিবেকখ্যাতি । উৎকট শ্রদ্ধা সহকারে যোগাঙ্গ অনুষ্ঠান করিতে করিতে ক্রমে ক্রমে তার হার করিয়৷ চিত্তমূল উন্মাজ্জিত হয়। তখন ক্রমে প্রকাশশক্তি বাড়িতে থাকে, পরে বিবেকখ্যাতি হইয়া আত্মসাক্ষাৎ হয় । যোগাঙ্গের বিধয় । যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণ, ধ্যান ও সম্প্রজ্ঞাত সমাধি এই ৮ট যোগাঙ্গ । ইহাদের মধ্যে কোনটী যোগের সাক্ষাৎকারণ বা কোনটী পরম্পর সম্বন্ধে উপকারক মায় । ভগবান পতঞ্জলি যমাদির লক্ষণ এইরূপ নির্দেশ করিয়াছেন,— অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচৰ্য্য ও অপরিগ্রহ এই পাঁচ প্রকার কার্য্যের নাম যম । এই যুমনামক যোগাঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম নামক যোগাগামুষ্ঠান সৰ্ব্বথা প্রয়োজনীয়। শৌচ, সন্তোষ, তপস্তা, স্বাধ্যায় ও ঈশ্বরপ্রণিধান এই পাঁচ প্রকার ক্রিয়ার নাম নিয়ম। এই সকল যোগাঙ্গানুষ্ঠানের সময় বিতর্ক উপস্থিত হয় । বিতর্ক যোগের একট প্রধান বিল্প । ছিংস ও দ্বেষ প্রভৃতি তামস মনোবৃত্তির নাম বিতর্ক। ইহা আবার তিন প্রকার—স্বেচ্ছাপূৰ্ব্বক বা স্বয়ংকৃত, অষ্ঠের অক্ষুরোধে কৃত ও অকুমোদনাদি দ্বারা নিম্পাদিত । এই ত্ৰিবিধ বিতর্ক • যোগীর পরিহার করিতে হইবে। যমাদি সাধন সম্পূর্ণ হইলে এইরূপ ফল হইয়া থাকে। প্রথমে অহিংসা—চিত্ত হিংসাশূন্ত হইলে অহিংসা ধৰ্ম্ম প্রবল পরাকাষ্ঠা প্রাপ্ত হয়, তাহা হইলে তাহার নিকট হিংস্র জন্তুর অহিংস্র হইয়া থাকিবে, যে যোগী অহিংস প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন, যতই কেন হিংস্র হউক না তাহার নিকট হিংস্র স্বভাব পরিত্যাগ করিবে। এই কারণেই তপোবনে যোগীদিগের তপোমহিমায় হিংস্র জন্তুগণ তাহদের হিংস্রস্বভাব পরিত্যাগ করিয়া অবস্থান করে । বাক্য ও মনে মিথ্যাশূন্ততাকে সত্য কহে । যে যোগীর এই সত্যপ্রতিষ্ঠা হইয়াছে, তিনি যে কোন বাক্য প্রয়োগ করিবেন, তাহাই সত্য হইবে। তিনি যদি বলেন, বন্ধ্যার পুত্র হইবে, তাহার বাক্যবলে নিশ্চয়ই তাহা হইবে । পরদ্রব্য অপহরণ স্বরূপ চেীর্য্যের অভাবকে অস্তেয় কহে । অন্তেয় প্রতিষ্ঠিত হইলে আর কিছুই অপ্রাপ্ত থাকে না, অমূল্য রত্নাদিও সমীপে উপস্থিত হয়। কোন রত্নাদিই দুষ্প্রাপ্য থাকে ন। ইঞ্জিয়দোষশূন্যতাকে ব্রহ্মচৰ্য্য কহে । এই ব্রহ্মচৰ্য্য প্রতিষ্ঠিত হইলে বীৰ্য্যলাভ হয় । ব্রহ্মচর্ঘ্যে প্রতিষ্ঠিত যোগীর