পাতা:শিখ-ইতিহাস.djvu/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিখ-ইতিহাস 8ט দেশসমূহ আক্রমণ করিয়াছিল। খৃষ্টীয় নবম শতাব্দীতে এই যুদ্ধপ্রিয় পশুপালক জাতি সিন্ধু নদ পরিত্যাগ করিয়া কৃষ্ণসাগরের নিকটবর্তী স্থানসমূহে বসতি স্থাপন করিতে আরম্ভ করে। পুরাকালে ‘গথ’ ও ‘ভ্যাগুলি জাতি এবং তাহাদের আদিপুরুষগণ ‘অগাষ্টল’ এবং “ট্রেজানের রাজ্যে প্রবেশ লাভ করিয়া যেভাবে শক্ৰহস্ত হইতে রাজ্য অধিকার করিয়াছিল, ইহারাও সেইরূপ মহম্মদের সাম্রাজ্য অধিকার করিয়া শাসন-সংরক্ষণ বিস্তার করিয়াছিল। তুগ্রল বেগ ও সালাদিন,—ষ্টিলিকে ও থিয়োডোরিকর অন্ততর শাখাবিশেষ । বাগদাদের মোল্ল এবং সৈয়দগণ, গ্রীক এবং লাটিন ধর্মমন্দির সম্প্রদায়ের ‘বিশপ এবং “ডিকন'দিগের ন্যায় ‘কাফের দিগকে স্বধর্মে দীক্ষিত করিতে উৎসুক হইয়াছিল । ভিন্ন দেশবাসী যে সকল অসভ্য জাতি সময়ে সময়ে ইউরোপ আক্রমণ করিত তাহারাও খৃষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হইয়াছিল। যাহার এসিয়া আক্রমণ করিত, তাহারাও তাঁহাদের উপযোগীবোধে স্বেচ্ছা-ক্রমে এবং অনুরাগবশতঃ ‘ইসলাম ধর্ম’ গ্রহণ করিয়াছিল । শিক্ষা ও সভ্যতার ফলে, তাহীদের অনিশ্চিত এবং ভিত্তিহীন বিশ্বাসগুলি দূর হইল ; এবং তাহারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপন করল। এক্ষণে তাহারা ধর্ম বলে পরিচালিত ; রাজ্য বিস্তার তাহাদের উদ্দেশ্য । এই ধর্ম এবং রাজ্য বিস্তার ‘লালসায় পরিচালিত হইয়া, তুৰ্ক জাতি বাইজান-টাইন সিজারদিগের ধ্বংসপ্রায় রাজ্য এবং ভারতবর্ষ আক্রমণ করিল। ১০০১ খৃষ্টাব্দে মহম্মদ সিন্ধুনদ অতিক্রম করেন । ইহার কিছুকাল পূর্বে শঙ্করাচার্য, বিধৰ্মীদিগের উন্নতিতে বাধা দিবার বৃথা প্রয়াস পাইয়াছিলেন। যে বিবিধ ধর্মমত প্রচলিত থাকায়, দেশবাসী জনসাধারণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়াছিল, তিনি সেই সকল বিভিন্ন মতের সংস্কার সাধনের চেষ্ট করেন ; কিন্তু তাহাতে তিনি কৃতকাৰ্য্য হইতে পারেন নাই। পঞ্জাব চিরদিনের জন্য মুসলমানদিগের অধিকৃত হয় এবং স্বলতানের মৃত্যুর পূর্বেই মুসলমানগণ কনৌজ ও গুজরাট লুণ্ঠন করে। ১১৮৩ খৃষ্টাব্দে ঘোরীগণ, ‘গজনবী দিগকে রাজ্য হইতে বিতাড়িত করে। তৎপরে তাহাঁদের কর্তৃক বাঙ্গালী দেশ অধিকৃত হয়। ১২০৬ খৃষ্টাব্দে যখন 'ইবেক তুর্কগণ ছলপূর্বক তাহাদের রাজ্য অধিকার করিয়া লয়, তখন হিন্দুস্থান মুসলমান রাজ্যের একটি স্বতন্ত্র অংশরূপে পরিণত হয়। পরে প্রায় দেড় শত বৎসরের মধ্যেই সমগ্র ভারতবর্ষে মুসলমানগণ আধিপত্য স্থাপন করে। খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মোগলগণ এবং পঞ্চদশ শতাব্দীতে আফগান জাতি বছল পরিমাণে ভারতবর্ষে আসিতে লাগিল। তাহাদের আগমনে পরবর্তী শাসন-কর্তাদিগের ক্ষমতা দৃঢ়তর হইল ; পরাজিত জাতির ভাষা ও ভাবে ক্রমশঃ পরিবর্তন ঘটিতে লাগিল। খিলজী, তোগলক এবং লোদীগণ এত অসভ্য ছিল যে, তাহারা আপনদের গোড়ামির কারণ পর্য্যন্ত অনুসন্ধান করিতে চাহিত না । তাহার রাজস্ব আদায় বিষয়ে যথেচ্ছ ব্যবহার করিত বটে ; কিন্তু প্রচলিত আইন উল্লঙ্ঘন করিত না । ধর্মে দীক্ষিত করা এবং অধিক পরিমাণে কর আদায় করা,—এই দুইটির মধ্যে শেষোক্তটি প্রশংসনীয় বিবেচনা না করিলেও, তাহারা তাঁহাই অধিকতর লাভজনক বলিয়া মনে করিত।