পাতা:বিশ্বকোষ সপ্তদশ খণ্ড.djvu/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিচ্ছবিরাজবংশ [ লিপির বিশেষ পার্থক্য নাই, উভয় লিপি মিলাইলে এক সময়ের বলিয়া গ্রহণ করিতে কাহারও সন্দেহ থাকিবে না। উত্তরভারতে গুপ্তসম্রাট্রদিগের পূৰ্ব্ব হইতে ষে সকল সংবৎ নাম নামধেয় লিপি প্রচলিত ছিল, তাহ প্রধানত: শিকসংবৎ জ্ঞাপক বলিয়া পুরাবিদগণ স্বীকার করিয়াছেন। এরূপ স্থলে আমরাও মানদেবের উক্ত লিপিখানি ৩৮৬ শক সংবৎজ্ঞাপক অর্থাৎ ৪৬৪ খুষ্টাব্দের বলিয়াই গ্রহণ করিলাম। লিপির বর্ণধিষ্ঠাস দ্বারাও মানদেবকে খৃষ্টীয় ৫ম শতাব্দীর লোক বলিয়া গ্রহণ করিতে কেহই আপত্তি করিবেন না । নেপালের পাৰ্ব্বতীয় বংশাবলিতে লিখিত আছে যে, ভারত হইতে বিক্রমাদিত্য নেপাল জয় করিতে গিয়াছিলেন । সমুদ্রগুপ্তের পিতা ১ম চন্দ্রগুপ্তও বিক্রমাদিত্য উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। স্বয়ং সমুদ্রগুপ্ত প্রয়াগের সুপ্রসিদ্ধ স্তম্ভলিপিতে ‘লিচ্ছবিদৌহিত্রস্ত মহাদেব্যাং কুমারদেব্যামুৎপন্নস্ত মহারাজাধিরাজশ্ৰীসমুদ্রগুপ্তস্ত” ইত্যাদি পরিচয়ে সুপরিচিত । অধিক সম্ভব চন্দ্র গুপ্ত ভারতসাম্রাজ্য অধিকার করিবার পর শৈবধৰ্ম্মপ্রচার, ব্রাহ্মণ্য-প্রাধান্তস্থাপন ও দিগ্বিজয় উপলক্ষে নেপাল যাত্রা করেন । তৎকালে নেপালে যুদ্ধভক্ত বৃষদেব অধিষ্ঠিত ছিলেন । লিচ্ছবিপতি ১ম গুপ্তসম্রাটের নিকট যুদ্ধে পরাজিত ও আপনার কন্যা বা আত্মীয়া কুমারদেবীকে প্রদান করিয়া আনুগত্য করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন । চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের প্রভাবে নেপাল-রাজকুমার শৈবধৰ্ম্ম স্বীকারের সহিত শঙ্করদেব নাম গ্রহণ করিয়াছিলেন । নেপালের পাৰ্ব্বতীয় বংশাবলিতেও লিখিত আছে যে, মানদেবের পিতামহ শঙ্করদেব পশুপতিনাথের ত্রিশূল প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন । পশুপতিনাথের মন্দিরের উত্তর স্বারে এক প্রস্তরবেদির উপর প্রায় ১৪ হাত উচ্চ শঙ্করদেবের প্রতিষ্ঠিত সেই ত্ৰিশূল বিদ্যমান। সেই প্রস্তরবেদিকায় মানদেবের সময়কার ৪১৩ ( শক ) সংবতে উৎকীর্ণ খোদিত লিপি রহিয়াছে। এই | লিপি পাঠে জানা যায় যে, জয়বৰ্ম্ম নৃপতি মানদেব ও জগতের হিতার্থ জয়েশ্বর নামক লিঙ্গপ্রতিষ্ঠা করিয়া তাহার সেবানিৰ্ব্বাহার্থ ‘অক্ষয়নীবী" অর্থাৎ চিরস্থায়ী সম্পত্তি দান করিয়াছিলেন। মানদেবের পর তৎপুত্র মহীদেব সিংহাসন লাভ করেন। মহীদেবের পুত্র বসন্তদেব। কাটমাধুর লগনতোলস্থ সুগালদেবীর মন্দির হইতে বসন্তদেবের ৪৩৫ ( শক ) সংবতের লিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে, এই শিলাফলকের উপর শঙ্খচক্র চিহ্নিত থাকায় বসন্তদেবকে বিষ্ণুভক্ত বলিয়া মনে হয়। ২য় জয়দেবের “শিলালিপিতে ইনি শাস্তারিবিগ্রহ’ ও ‘উদাস্তসামন্তবন্দিত ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষিত হইয়াছেন। বসন্তদেবের পুত্র উদয়দেব । ২য় জয়দেবের লিপি মতে, উদয়দেবের পর তত্ত্বংশীয় ১৩ ২৭৯ ] লিচ্ছবিরাজবংশ জন রাজত্ব করেন। এই ত্রয়োদশ নৃপতির নাম পাওয়া যায় নাই । তন্মধ্যে কেবল মাত্র ধ্রুবদেব নামক এক রাজার নাম বাহির হইয়াছে। এই ধ্রুবদেবের সময়ে মহাসামন্ত অংশুবৰ্ম্মার অভু্যদয় । নেপালে বর্তমান কালে জঙ্গ বাহাদুর যেমন কতকটা সৰ্ব্বে সৰ্ব্ব হইয়া পড়িয়াছিলেন, ধ্রুবদেবের পর অংশুবৰ্ম্ম কতকটা সেইরূপ কর্তৃত্ব লাভ করিয়াছিলেন। অংশুবৰ্ম্ম প্রথমে মহাসামন্ত বলিয়া পরিচিত হইলেও তিনি অনেক শ্রেষ্ঠ নরপতির সহিত আত্মীয়তাস্থত্রে আবদ্ধ হইয়াছিলেন। তাহার ভগিনী ভোগদেবীর সহিত পূপেন নৃপতির বিবাহ হয়। অংশুবৰ্ম্মার শিলালিপিতে লিখিত হইয়াছে যে, তাহার ভগিনী শূরসেন-মহিষী ভোগদেবীর গর্ভে রাজা ভোগবশী জন্ম গ্রহণ করেন। ভোগদেবী নিজ পতির পুণ্য কামনায় ( দেবপাটনে ) শুরভোগেশ্বর মুক্তি প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। ভোট ও চীনের ইতিহাস হইতেও আমরা জানিতে পারি যে, ভোট (তিব্বত ) দেশের প্রসিদ্ধ নৃপতি স্রোন্ ৎস গম্পো ৬৩৭ খৃষ্টাব্দে নেপালপতি অংশুবৰ্ম্মার কন্যা ক্রকুট দেবীকে বিবাহ করেন ; আজও ভোটদেশে ক্রকুট দেবী পূজিত হইতেছেন । [ লামা দেখ । ] অংশুবৰ্ম্মার সময়েই লিচ্ছবিকুলে নরেন্দ্রদেব ও তৎপুত্র শিবদেব আবির্ভূত হন। নেপালে গোলমাঢ়িটােল হইতে শিবদেবের এক থানি শিলাফলক পাওয়া যায় । তাহাতে ৩১৬ বা ৩১৮ সংবৎ অঙ্কিত আছে। এই লিপিতে মহাসামন্ত অংশুবৰ্ম্মার প্রসঙ্গ থাকায় ঐ লিপিকে আমরা খৃষ্টীয় ৭ম শতাব্দীর বলিয়৷ অনায়াসেই গ্রহণ করিতে পারি। গুপ্তসম্রাট দিগের সষ্ঠিত নেপাল রাজগণের বহুকাল হইতে সম্বন্ধ ছিল, এরূপ স্থলে উক গুপ্ত সংবৎজ্ঞাপক বলিয়া স্বীকার করিলেও ৩১৯+৩১৮ = ৬৩৭ খৃষ্টাব্দের সমসাময়িক হইয় পড়ে। 姆 লিচ্ছবিপতি শিবদেবের সহিত মৌথরিপতি ভোগবন্মার কন্যা ও মগধপতি মহারাজ আদিত্যসেনের দৌহি শ্ৰী শ্রীমতী বৎসদেবীর বিবাহ হয়। সেই বৎসদেবীর গর্ভে লিচ্ছবি-কুলকেতু পরচক্রকাম উপাধিধারী ২য় জয়দেব জন্ম গ্রহণ করেন । এই ২য় জয়দেবের শিলালিপি হইতে জানা যায় যে তিনি গৌড়, ওড়, কলিঙ্গ ও কোশলপতি ভগদত্তবংশীয় প্রহর্যদেবের কস্তা রাজ্যমর্তীকে বিবাহ করেন। তিনি শিলাফলকে ত্যাগী, মানধন, বিশালনয়ন ও সৌজন্তরত্নাকর বলিয়া পরিচিত হইয়াছেন । ২য় জয়দেবের শ্বশুর ঐহর্ষদেবকে লইয়া বহুদিন হইতে গোল চলিতেছিল। ভগদত্তবংশীয় রাজগণ প্রাগজ্যোতিষে (আসামে) রাজত্ব করিতেন। খৃষ্টীয় ৭ম শতাৰো বাণভট্ট হর্ষচরিত রচনা করেন। তিনি এইরূপ পরিচয় দিয়া গিয়াছেন