পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

XV, যশোহর-খুলনার ইতিহাস। গেীরীর পশ্চিমদিকে মাথাভাঙ্গা নামক শাখা পদ্ম হইতে বাহির হইয়াছে। নদীয়ার অন্তর্গত আলমডাঙ্গ রেলওয়ে ষ্টেশনের কাছে, এই মাথাভাঙ্গ হইতেই কুমার নদ প্রবাহিত হইয়া যশোহরে প্রবেশ করিয়াছে। প্রায় ৮০ বৎসর পূৰ্ব্বে মাথাভাঙ্গার মূলস্রোত দুৰ্ব্বল হওয়াতে কুমারের প্রতাপ থৰ্ব্ব করিবার জন্ত উহার মুখে বাধদিয়া বা অন্তোপায়ে স্রোতের গতি ফিরাইবার চেষ্ট হইয়াছিল। কিন্তু নদী আপন পথ লয়, পরের বাধা মানে না। সুতরাং চেষ্টা সফল হয় নাই। বহুদিন পর্যন্ত কুমার বৎসর ভরিয়া সুপেয় সলিলপূর্ণ থাকিয়া সৰ্ব্ববিধ তরণীর গমনপথ হইত। কিন্তু এখন আর ইহার সে অবস্থা নাই। কুমারের পর মাথাভাঙ্গ হইতে আর একটি শাখা বাহির হইয়াছিল, তাহার নাম নবগঙ্গা। কিন্তু সেই মুখের কাছে, চুয়াডাঙ্গার পূর্বদিকে এক বিলের মধ্যে পড়িয়া কালে মূল মাথাভাঙ্গার সহিত উহার সংযোগ নষ্ট হইয়া যায়। সুতরাং তথা হইতে নদী মজিয়া জলজবৃক্ষে পরিপূর্ণ হইয়। রুদ্ধগতি হইয়াছে। মাগুরা নগরের উত্তরাংশে মুচিখালি নামক একটি খালের দ্বারা নবগঙ্গার সহিত কুমারের মিলন হইয়াছিল। কুমার এই সংযোগের ফলে নবগঙ্গাকে পুনর্জীবিত করিয়াছে। কুমার পূৰ্ব্বমুখে গৌরীতে মিশিয়া গিয়াছে এবং অপর পার হইতে বাহির হইয় চন্দন নামক পদ্মার অন্য শাখার সহিত ইহার সংযোগ হইয়াছে। কুমার পুনরায় আত্ম প্রকাশ করিয়া ফরিদপুর জেলায় বহুদূর পর্য্যন্ত বিস্তৃত আছে। নবগঙ্গা কুমারের জলে সঞ্জীবিত হইয়া স্বচ্ছসলিলে উভয়কূলে সোণ ফলাইয়া, যশোহর জেলার উত্তরাংশের যথেষ্ট শ্ৰীবৃদ্ধি সাধন করিয়াছে। মাগুর, বিনোদপুর, সত্রাজিৎপুর, নহাট, সিঙ্গিয়া, নলদী, রায়গ্রাম, লক্ষ্মীপাশা, লোহাগড়া প্রভৃতি বিখ্যাত স্থানগুলি নবগঙ্গার ক্রীড়াভূমির ফল। মাগুর হইতে ৩৪ মাস কাল এবং বিনোদপুর হইতে লোহাগড়া পৰ্য্যন্ত বারমাস সমভাবে নবগঙ্গায় নৌকার যাতায়াত চলে। ইহার “সুধীসম স্বাঞ্ছনীর” স্বাস্থ্যের পক্ষে পরম উপাদেয়। ইহার তীরভূমিতে অপরিমিত শস্ত ফলে। খাদ্য দ্রব্যের দুৰ্গতি সৰ্ব্বত্র হইলেও এখনও নবগঙ্গার পাশ্ববৰ্ত্তী স্থানের লোকে মৎস্ত দুগ্ধের তেমন অভাব অনুভব করে না। লোহাগড়া হইতে নবগঙ্গা সোজা কালনার নিকট মধুমতীতে মিশিয়াছিল, কিন্তু সে অংশ এক্ষণে মজিয়া গিয়াছে, কারণ বাণকাণ নামক একটি শাখা এই স্থান হইতে নবগঙ্গার জল লইয়া কালিয়ার পাশ্ববর্তী কালীগঙ্গায় মিশাইতেছে।