পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/৪৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হরিদাস । ৩৬৫ করিবে বলিয়া রামচন্ত্রের নিকট গৰ্ব্বিত প্রতিজ্ঞা করিল। কাগজপুকুরিয়ার সন্নিকটে গয়ড়া-রাজাপুরে হীরার জন্ত বাটা প্রস্তুত হইয়াছিল ; রামচন্দ্র ময়ূরপঞ্জী তরণীতে চড়িয়া যে পথে হীরার বাট যাতায়াত করিতেন, সে পথে খালের চিহ্ন এখনও আছে ; রাজাপুর এক্ষণে লোকশূন্ত প্রান্তর হইয়া গিয়াছে। সেখানে হীরার ভিটার ইষ্টকাদি ভগ্নাবশেষ এবং “হীরার পুকুরের” খাত এখনও সেই প্রাচীন কালের সাক্ষ্য দিতেছে। হাবভাবময়ী হীরা রত্নালঙ্কারে বিভূষিত হইয়া হরিদাসের সন্নিকটবৰ্ত্তী হইল। কি দেখিল? দেখিল নির্জন কুটরে ভক্তসাধু বীণাবনিন্দিত দিব্য মধুর ঝঙ্কারে হরিনাম জপ করিতেছেন। বেঙ্গ বারংবার বিরক্ত করিতে লাগিল। হরিদাস বলিলেন “আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি জপ শেষ করিয়াই আপনার কথা শুনিব।” হীরা বসিয়া থাকিল, বসিয়া বসিয়া দিন গেল, রাত্রি গেল, ঝঙ্কার আর থামে না, জপ আর শেষ হয় না। তেমনই নিম্পন্দ তনু, নিশীথ-নিস্তব্ধতা ভেদ করিয়া তেমনি মধুর ঝঙ্কার। হীরারও চাঞ্চল্যের সমাধি হইতে চলিল। রাত্রির শেষযামে হরিদাস শৌচাদির জন্য গাত্ৰোখান করিয়া বলিলেন “আজ আমার নির্দিষ্ট জপ শেষ করিতে বড় বিলম্ব হইয়াছে, আপনি অনুগ্রহপূর্বক কলা আসিবেন, আমি আপনার সহিত বাক্যালাপ করিয়া তৃপ্তিলাভ করিব।” দিবাশেষে হীরা পুনরায় আসিল ; রাম খাঁ তাহাকে উদ্রিক্ত করিতে ছাড়েন নাই। সে দিনও হীরা আসিয়া দেখিল—সেই জপনিরত সাধুর তেমনই মধুর মূৰ্ত্তি—সে মূৰ্ত্তি হইতে যেন কি দিব্য জ্যোতি: ক্ষরিয়া পড়িতেছে। হীরা বসিয়া রহিল, আজ সকাল সকাল জপ শেষ করিয়া সাধু হীরার ফদে ধর পড়িবেন। কিন্তু তাহ হইল না। রাত্রি আসিল, হীরা বসিয়া আছে। দ্বাগত গ্রাম্য কোলাহল বিলুপ্ত হইল, কিন্তু জপের ঝঙ্কার চলিতেছে। কি মধুর নাম! নামের স্বভাব-শক্তিতে কেমন যে হৃদয়ে আঘাত করে, মানুষকে কেমন উদাস করিয়া দেয় ! হীরা ভাবিতে লাগিল “অপার আনন্দ না হইলে লোকে কি এমন করিয়া নিম্পন্দভাবে বসিয়া থাকিতে পারে ? সাধুর কি আনন, আমারই বা কি আনন, আমার জীবনে কি করিলাম ? “পরমুহূর্তে কে যেন রশ্বি টানিয়া ধরিল, হীরা আবার দন্ত কটমট করিয়া সাধুর ভণ্ডামি ভাঙ্গিবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়া রহিল। কিন্তু রাত্রি শেষে আবার সেই মধুর