পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ סל কামাখ্যা বাবু মনে মনে বলিলেন, “বাতিক। ইহার একটু চিকিৎসা আবশ্বক। কিন্তু প্রথম চিকিৎসা বোধ হয়, রুক্মিণীকুমারের সন্ধান কর।” কামাখ্যা বাবু রুক্মিণীকুমারের সন্ধানে প্রবৃত্ত হইলেন। স্বয়ং কলিকাতায় তাহায় অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন। বন্ধুবৰ্গকেও সেই সন্ধানে নিযুক্ত করিলেন। দেশে দেশে আপনার মোয়াক্কেলগণকে পত্র লিখিলেন। প্রতি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিলেন। সে বিজ্ঞাপন এইরূপ— “বাবু রুক্মিণীকুমার রায়, নিম্ন স্বাক্ষরকারী ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবেন–বিশেষ প্রয়োজন আছে। ইহাতে রুক্মিণী বাবুর সন্তোষের ব্যতীত অসন্তোষের কারণ উপস্থিত হইবে না । موسسffi آن تق কিন্তু কিছুতেই রুক্মিণীকুমাবের কোন সন্ধান পাওয়া গেল না। দিন গেল, মাস গেল, বৎসর গেল, তথাপি কৈ, রুক্মিণীকুমার ত আসিল না। ইহার পর রাধারাণীর আর একটি ঘোরতর বিপদ উপস্থিত হইল—কামাখ্যা বাবুর ' লোকাস্তুরগতি হইল। রাধারাণী ইহাতে অত্যন্ত শোকাতুর হইলেন, দ্বিতীয় বার পিতৃহীনা' ' হইলেন মনে করিলেন। কামাখ্যা বাবুর শ্রাদ্ধাদির পর রাধারাণী আপন বাটতে গিয়া বাস করিতে লাগিলেন এবং নিজ সম্পত্তির তত্ত্বাবধান স্বয়ং করিতে লাগিলেন। কামাখ্যা বাবুর বিচক্ষণতা হেতু রাধারাণীর সম্পত্তি বিস্তর বাড়িয়াছিল। বিষয় হস্তে লইয়াই রাধারাণী প্রথমেই দুই লক্ষ মুদ্রা গবর্ণমেণ্টে প্রেরণ করিলেন। তৎসঙ্গে এই প্রার্থনা করিলেন যে, এই অর্থে তাহার নিজ গ্রামে একটি অনাথনিবাস স্থাপিত হউক। তাহার নাম হউক—“রুক্মিণীকুমারের প্রাসাদ ।” গবর্ণমেণ্টের কৰ্ম্মচারিগণ প্রস্তাবিত নাম শু-য় কিছু বিস্মিত হইলেন, কিন্তু তাহাতে কে কথা কহিবে ? অনাথনিবাস সংস্থাপিত হইল। রাধারাণীর মাতা দরিদ্রাবস্থায় নিজ গ্রাম ত্যাগ করিয়া স্ত্রীরামপুরে কুটার নির্মাণ করিয়াছিলেন ; কেন না, যে গ্রামে যে ধনী ছিল, সে সহসা দরিদ্র হইলে, সে গ্রামে তাহার বাস করা কষ্টকর হয়। র্তাহাদিগের নিজ গ্রাম শ্রীরামপুর হইতে কিঞ্চিং দুর-আমরা সে গ্রামকে রাজপুর বলিব। এক্ষণে রাধারাণী রাজপুরেই বাস করিতেন। অনাথনিবাসও রাধারাণীর বাড়ীর সম্মুখে, রাজপুরে সংস্থাপিত হইলু। নানা দেশ হইতে দীন দুঃখী অনাথ আসিয়া তথায় বাস করিতে লাগিল।