পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३8 ब्रञ्जनौ * , আমাকে বলিল, “নাম—আসিয়াছি।”—সে আমার হাত ধরিয়া নামাইল। আমি কূলে ষ্টুড়িাইলাম। - তাহার পরে শব্দ শুনিলাম, যেন হীরালাল আবার নৌকায় উঠিল। মাঝিদিগকে বলিল, “দে, নৌকা খুলিয়া দে।” আমি বলিলাম, "সে কি ? আমাকে নামাইয়া দিয়া নৌকা খুলিয়া দাও কেন ?” হীরালাল বলিল, “আপনার পথ আপনি দেখ।” মাঝির নৌকা খুলিতে লাগিল— দাড়ের শব্দ শুনিলাম। আমি তখন কাতর হইয়া বলিলাম, “তোমার পায়ে পড়ি। আমি অন্ধ—যদি একান্তই আমাকে ফেলিয়া যাইবে, তবে কাহারও বাড়ী পর্য্যন্ত আমাকে রাখিয়া দিয়া যাও। আমি ত এখানে কখনও আসি নাই—এখানকার পথ চিনিব কি প্রকারে ?” হীরালাল বলিল, “আমাকে বিবাহ করিতে সম্মত আছ ?” আমার কান্না আসিল। ক্ষণেক রোদন করিলাম ; রাগে হীরালালকে বলিলাম, “তুমি যাও। তোমার কাছে কোন উপকারও পাইতে নাই—রাত্রি প্রভাত হইলে তোমার অপেক্ষা দয়ালু শত শত লোকের সাক্ষাৎ পাইব। তাহারা অন্ধের প্রতি তোমার অপেক্ষা দয়া করিবে ।” হী। দেখা পেলে ত? এ যে চড়া ! চারি দিকে জল । আমাকে বিবাহ করিবে ? হীরালালের নৌকা তখন কিছু বাহিরে গিয়াছিল। শ্রবণশক্তি আমার জীবনাবলম্বন —শ্রবণই আমার চক্ষের কাজ করে। কেহ কথা কহিলে—কত দূরে, কোন দিকে কথা কহিতেছে, তাহ অনুভব করিতে পারি। হীরালাল কোন দিকে, কত দূরে থাকিয়া কথা কহিল, তাহা মনে মনে অনুভব করিয়া, জলে নামিয়া সেই দিকে ছুটিলাম—ইচ্ছ, নৌক৷ ধরিব। গলাজল অবধি নামিলাম। নৌকা পাইলাম না। নৌকা আরও বেশী জলে। নৌকা ধরিতে গেলে ডুবিয়া মরিব । তালের লাঠি তখনও হাতে ছিল। আবার ঠিক করিয়া শব্দানুভর করিয়া বুঝিলাম, হীরালাল এই দিকে, এত দূর হইতে কথা কহিতেছে। পিছু হটিয়া, কোমর জলে উঠিয়, শব্দের স্থানামুভব করিয়া, সবলে সেই তালের লাঠি নিক্ষেপ করিলাম। চীৎকার করিয়া হীরালাল নৌকার উপর পড়িয়া গেল। “খুন হইয়াছে, খুন হইয়াছে।” বলিয়া মাঝির নৌকা খুলিয়া দিল। বাস্তবিক—সেই পাপিষ্ঠ খুন হয় নাই। তখনই তাহার মধুর কণ্ঠ শুনিতে পাইলাম—নৌকা বাহিয়া চলিল—সে উচ্চৈঃস্বরে আমাকে গালি দিতে দিতে চলিল—অতি কদৰ্য্য অশ্রাব্য ভাষায় পবিত্র গঙ্গা কলুষিত করিতে করিতে