পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম খণ্ড : চতুর্থ পরিচ্ছেদ أسوأ মুছিয়া লইয়া আসন পাতিল। আমি বিলক্ষণ দেখিয়াছিলাম যে, রজনী সেই জল স্পর্শ না করিয়াই আসন পাতা বন্ধ করিয়া জল মুছিয়া লইয়াছিল। অতএব স্পর্শের দ্বারা কখনই সে জানিতে পারে নাই যে, সেখানে জল আছে। অবশ্য সে জল দেখিতে পাইয়াছিল। আমি আর থাকিতে পারিলাম না। জিজ্ঞাসা করিলাম, “রজনি, এখন তুমি কি দেখিতে পাও ?” রজনী মুখ নত করিয়া, ঈষৎ হাসিয়া বলিল, “হঁ৷ ” আমি বিস্মিত হইয়া শচীন্দ্রের মুখপানে চাহিলাম। শচীন্দ্র বলিলেন, “আশ্চৰ্য্য বটে, কিন্তু ঈশ্বরকৃপায় না হইতে পারে, এমন কি আছে ? আমাদিগের ভারতবর্ষে চিকিৎসাসম্বন্ধে কতকগুলি অতি আশ্চর্ঘ্য প্রকরণ ছিল—সে সকল তত্ত্ব ইউরোপীয়েরা বহুকাল পরিশ্রম করিলেও আবিষ্কৃত করিতে পারিবেন না। চিকিৎসাবিদ্যায় কেন, সকল বিস্তাতেই এইরূপ { কিন্তু সে সকল এক্ষণে লোপ পাইয়াছে, কেবল ছুই একজন সন্ন্যাসী উদাসীন প্রভৃতির কাছে সে সকল লুপ্তবিদ্যার কিয়দংশ অতি গুহভাবে অবস্থিতি করিতেছে। আমাদিগের বাড়ীতে একজন সন্ন্যাসী কখন কখন যাতায়াত করিয়া থাকেন, তিনি আমাকে ভালবাসিতেন। তিনি যখন শুনিলেন, আমি রজনীকে বিবাহ করিব, তখন বলিলেন, শুভদৃষ্টি হইবে কি প্রকারে ? কন্যা যে অন্ধ। আমি রহস্য করিয়া বলিলাম, আপনি অন্ধত্ব আরোগ্য করুন।’ তিনি বলিলেন, ‘করিব—এক মাসে। ঔষধ দিয়া, তিনি এক মাসে রজনীর চক্ষে দৃষ্টির স্বজন করিলেন ।” - অামি আরও বিস্মিত হইলাম ; বলিলাম, “না দেখিলে, আমি ইহা বিশ্বাস করিতাম না। ইউরোপীয় চিকিৎসাশাস্ত্রানুসারে ইহা অসাধ্য।” এই কথা হইতেছিল, এমত সময়ে এক বৎসরের একটি শিশু, টলিতে টলিতে, চলিতে চলিতে, পড়িতে পড়িতে, উঠিতে উঠিতে সেইখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। শিশু আসিয়া, রজনীর পায়ের কাছে দুই একটা আছাড় খাইয়া, তাহার বস্ত্রের একাংশ ধৃত করিয়া টানাটানি করিয়া উঠিয়, রজনীর আঁটু ধরিয়া তাহার মুখপানে চাহিয়, উচ্চহাসি হাসিয়া উঠিল। তাহার পরে, ক্ষণেক আমার মুখপানে চাহিয়া, হস্তোত্তোলন করিয়া আমাকে বলিল, “দা ।” ( যা ! ) আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কে এটি ?” শচীন্দ্র বলিলেন, “আমার ছেলে ।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “ইহার নাম কি রাখিয়াছেন?”