পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্ৰহ দিদি কয়েক মুহূৰ্ত্ত চুপ করিয়া চাহিয়া থাকিয়া সহসা খিল্‌খিল্‌ করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। সে কি মধুর হাসি। অমন করিয়া হাসিতে আমি আজ পর্য্যন্ত কম লোককেই দেখিয়াছি। কিন্তু সে যেন নিবিড় মেঘভরা আকাশের বিদ্যুৎ-দীপ্তির মত পরক্ষণেই অন্ধকারে মিলাইয়া গেল । কিন্তু ইন্দ্র সেদিক দিয়াই গেল না। বরঞ্চ একেবারে পাইয়া বসিল। সেও হালিয়া কহিল, আমি জানি, তুমি সব জানো। কিন্তু আমাকে একটি একটি করে তোমাকে সব বিদ্যে দিতে হবে, তা বলে দিচ্চি। আমি যতদিন বাচব, তোমাদের একেবারে গোলাম হয়ে থাকব । তুমি কটা মড়া বঁচিয়েচ দিদি ? দিদি কহিলেন, আমি ত মড়া বাচাতে জানিনে ইন্দ্রনাথ ! ইন্দ্র প্রশ্ন করিল, তোমাকে এ মস্তর শাহ জী দেয়নি ? দিদি ঘাড় নাড়িয়া 'না' বলিলে, ইন্দ্র মিনিট-খানেক তার মুখের পানে চাহিয়া থাকিয়া নিজেই তখন মাথা নাড়িতে নাড়িতে বলিল, এ বিদ্যে কি কেউ শীগগির দিতে চায় দিদি । আচ্ছা, কড়ি-চালাটা নিশ্চয়ই শিখে নিয়েচ, না ? দিদি বলিলেন, কাকে কড়ি-চাল বলে, তাই ত জানিলে ভাই । ইন্দ্র বিশ্বাস করিল না। বলিল, ইস্! জান না বৈ কি ! দেবে না, তাই বল । আমার দিকে চাহিয়া কহিল, কড়ি-চাল। কখনো দেপেচিল শ্ৰীকান্ত ? দুট কড়ি মস্তর প’ড়ে ছেড়ে দিলে তার উড়ে গিয়ে যেখানে সাপ আছে, তার কপালে গিয়ে কামড়ে ধ’রে সপিটাকে দশ দিনের পথ থেকে টেনে এনে হাজির ক’রে দেয়। এমনি মস্তরের জোর। আচ্ছা দিদি, ঘর বন্ধন, ধূলো-পড়া, এসব জান ত ? আর যদি নাই জান্‌বে ত অমন সাপটাকে ধ’রে দিলে কি করে ? বলিয়া সে জিজ্ঞামূ-দৃষ্টতে দিদির মুখের পানে চাহিয়া রহিল। - দিদি অনেকক্ষণ নি:শব্দে নতমুখে বসিয়া মনে মনে কি যেন চিন্তা করিয়া লইলেন ; শেষে মুখ তুলিয়া ধীরে ধীরে বলিলেন, ইন্দ্ৰ, তোর দিদির এ-সব কানাকড়ির বিদ্যেও নেই। কিন্তু, কেন নেই, সে যদি তোরা বিশ্বাস করিস ভাই, তা হ’লে আজ তোদের কাছে আমি সমস্ত ভেঙ্গে ব’লে আমার বুকখানা হাল্কা ক’রে ফেলি। বল, তোরা আমার সব কথা আজ বিশ্বাস করবি ? বলিতে বলিতেই তাহার শেষের কথাগুলি কেমন একরকম যেন ভারী হইয়া উঠিল। আমি নিজে এতক্ষণ প্রায় কোন কথাই কহি নাই । এইবার সর্বাগ্রে জোর করিয়া বলিয়া উঠিলাম, আমি তোমার সব কথা বিশ্বাস করব দিদি। সব—যা বলবে সমস্ত । একটি কথাও অবিশ্বাস করব না। তিনি আমার প্রতি চাহিয়া একটুখানি হাসিয়া বলিলেন, বিশ্বাস করবে বৈ 를