পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত বেঠিক হইয়া উঠিতেছিল। র্তাহাকে কাছে ডাকিয়া বলিলাম, যতক্ষণ আমার ইশ আছে, ততক্ষণ মাঝে মাঝে দেখবেন ; তার পরে যা হয় তা হোক, আপনি আর কষ্ট করবেন না । ভদ্রলোক অত্যন্ত মুখচোরা প্রকৃতির লোক। কথা সাজাইয়া বলিবার ক্ষমতা তাহার ছিল না। প্রত্যুত্তরে তিনি ‘না না বলিয়াই চুপ করিলেন। বলিলাম, আপনি সংবাদ দিতে চেয়েছিলেন । আমি সন্ন্যাসী মানুষ, আমার যথার্থ আপনার জন কেউ নেই। তবে পাটনার পিয়ারী বাইজীর ঠিকানায় যদি একখানা পোস্টকার্ড লিখে দেন, যে শ্ৰীকান্ত আরা স্টেশনের বাইরে একটা টিনশেডের মধ্যে মরণাপন্ন হ’য়ে পড়ে আছে, তা হ’লে— ভদ্রলোক শশব্যস্ত হইয়া উঠিলেন । আমি এখনি দিচ্চি ; চিঠি এবং টেলিগ্রাফ দুই-ই পাঠিয়ে দিচ্চি ; বলিয়া তিনি উঠিয়া গেলেন । আমি মনে মনে বলিলাম, ভগবান, সংবাদটা যেন সে পায় । 赛 苯 豪 来 辛 জ্ঞান হইয়া প্রথমটা ভাল বুঝিতে পারিলাম না । মাথায় হাত দিয়া ঠাহর করিয়া টের পাইলাম, সেটা আইস ব্যাগ । চোখ মেলিয়া দেখিলাম ঘরের মধ্যে একট। খাটের উপরে শুইয়া আছি। স্বমুখের টুলের উপর একটা আলোর কাছে গোট। দুই-তিন ঔষধের শিশি ; এবং তাহারই পাশে একটা দড়ির খাটিয়ার উপর কে একজন লাল-চেক র্যাপার গায়ে দিয়া শুইয়া আছে। অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত কিছুই স্মরণ করিতে পারিলাম না। তার পরে একটু একটু করিয়া মনে হইতে লাগিল, ঘুমের ঘোরে কত কি যেন স্বপ্ন দেখিয়াছি। অনেক লোকের আসা-যাওয়া, ধরাধরি করিয়া আমাকে ডুলিতে তোলা, মাথা হাড় করিয়া ওষুধ খাওয়ানো—এমনি কত কি ব্যাপার । খানিক পরে লোকটি যখন উঠিয়া বসিল, দেখিলাম, ইনি একজন বাঙালী ভদ্রলোক, বয়স আঠারো-উনিশের বেশী নয়। তখন আমার শিয়রের নিকট হইতে মৃদুস্বরে যে তাহাকে সম্বোধন করিল, তাহার গলা চিনিতে পারিলাম । পিয়ারী অতি মৃদুকণ্ঠে ডাকিল, বন্ধু, বরফট। একবার কেন বদলে দিলিনে বাবা! ছেলেটি বলিল, দিচ্চি, তুমি একটুখানি শোও না মা। ডাক্তারবাবু যখন ব’লে গেলেন বসন্ত নয়, তখন ত আর কোন ভয় নেই মা । পিয়ারী কহিল, ওরে বাবা, ডাক্তারে ভয় নেই বললেই কি মেয়েমানুষের ভয় যায় ? তোকে সে ভাবনা করতে হবে না বন্ধু, তুই শুধু বরফটা বদলে দিয়ে শুয়ে পড়—আর রাত জাগিল নেঃ। SY (t