পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্রনাথ উৎসাহ নাই, দুঃখ-ক্লেশও প্রায় নাই, স্বখের কামনা ত সে একেবারেই ছাড়ির দিয়াছে। শীর্ণকায়া নদীর উপর দিয়া সন্ধ্যার দীর্ঘ ভারবাহী তরুণী যেমন করিয়া এপাশ ওপাশ করিয়া হেলিয়া ছলিয়া বাকিয়া চুরিয়া মন্থরগমনে স্বেচ্ছামত ভাসিয়া যায়, চন্দ্রনাথের ভাবী দিনগুলোও ঠিক তেমনি করিয়া এক স্বৰ্য্যোদয় হইতে পুনঃ হুর্য্যোদয় পৰ্য্যন্ত ভাসিয়া যাইতে থাকে। সে নি:সংশয়ে বুঝিয়াছে, যে দিগন্ত প্রসারিত কালোমেঘ তাহার হুখের স্বৰ্য্যকে জীবনের মধ্যাহ্নেই আচ্ছাদিত করিয়াছে, এই মেঘের আড়ালেই একদিন সে স্বৰ্য্য অস্তগমন করিবে। ইহজীবনে আর তাহার সাক্ষাৎলাভ ঘটিবে না। তাহার নীরব, নিজন কক্ষে এই নিরাশার কাল-ছায়াই প্রতিদিন ঘন হইতে ঘনতর হইতে লাগিল এবং তাহারি মাঝখানে বসিয়া চন্দ্রনাথ অলস-নিৰ্মীলিত চোখে দিন কাটাইয়া দিতে লাগিল । হরকালী বলেন, এই অগ্রহায়ণ মাসেই চন্দ্রনাথের আবার বিবাহ হইবে। চন্দ্রনাথ চুপ করিয়া থাকে। এই চুপ করিয়া থাকা সম্মতি বা অসম্মতির লক্ষণ, তাহ নির্ণয় করিতে স্বামীর সঙ্গে তাহার তর্ক-বিতর্ক হয়। মণিশঙ্করবাবুকে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলেন, চন্দ্রনাথকে জিজ্ঞাসা না করিয়া কিছু বলা যায় না । এবার কান্তিক মাসে দুর্গা-পূজা। মণিশঙ্করের ঠাকুর-দালান হইতে সানাইয়ের গান প্রাতঃকাল হইতেই গ্রামবাসীদের কানে কানে আগামী আনন্দের বার্তা ঘোষণা করিতেছে। চন্দ্রনাথের ঘুম ভাঙ্গিয়াছিল। নিমীলিতচক্ষে বিছানায় পড়িয়া গুনিতেছিল, একে একে কত কি স্বর বাজিয়া যাইতেছে । কিন্তু একটা স্বরও তাহার কাছে আনন্দের ভাষা বহিয়া আনিল না ; বরঞ্চ ধীরে ধীরে হৃদয়-আকাশ গাঢ় কালোমেঘে ছাইয়া যাইতে লাগিল। আজ হঠাৎ তাহার মনে হইল, এখানে আর ত থাকা যায় না ; একজন ভৃত্যকে ডাকিয়া কহিল, আমার জিনিসপত্র গুছিয়ে নে, রাত্রির গাড়িতে এলাহাবাদ যাব । এ কথা হরকালী শুনিতে পাইয়া ছুটিয়া আসিলেন, ব্রজকিশোর আসিয়া বুঝাইতে লাগিলেন, এমন কি মণিশঙ্কর নিজে আসিয়াও অনুরোধ করিলেন যে, আজ যষ্ঠীর দিনে . কোথাও গিয়া কাজ নাই । চন্দ্রনাথ কাহারও কথা শুনিল না। দুপুরবেলা হরিবালা আসিয়া উপস্থিত হইলেন। সরযু গিয়া অবধি এ বাটতে তিনি আসেন নাই । চজনাখ তাহাকে দেখিয়া বলিল, হঠাৎ ঠান্‌দিদি কি মনে ক’রে । ঠানূদিদি তাহার জবাব না দিয়া প্রশ্ন করিলেন, আজ বিদেশে যাচ্চ ? চজনাখ বলিল, যাচ্চি ।