পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত বলিলাম, যা জোটে । নবীন কহিল, দুধ মুড়ি আর ভালো আখের গুড় আছে। আজকের মত যোগাঞ্জ-- বলিলাম, খুব খুব, এ বাড়িতে ও জিনিসের আমার অভ্যাস আছে। আর কিছু যোগাড়ের দরকার নেই বাবা, তুমি বরঞ্চ আস্তো দেখে একখানা ইট যোগাড় করে আনো । গৰ্ত্তটা একটু মজবুত করে চাপা দাও—দপিনে বাতাসে ভরপুর হয়ে ওঁরা যখন ঘরে ফিরবেন তখন হঠাৎ না ঢুকে পড়তে পারেন । নবীন আলো দিয়া চৌকির তলায় কিছুক্ষণ উকিঝুকি মারিয়া বলিল, না:– হবে না । কি হবে না হে ? সে মাখ। নাড়িয়া বলিল, না, হবে না। খালের মুখ কি একটা বাৰু ? এক পাজ ইট চাই যে। ইদুরে মেঝেট। একেবারে বাঝু করে রেখেচে । গহর বিশেষ বিচলিত হইল না, শুধু লোক লাগাইয়া কাল নিশ্চয় ঠিক করিয়া ফেলিতে হুকুম করিয়া দিল । নবীন হাত-পা ধুইবার জল দিয়া ফলারের আয়োজন ভিতরে চলিয়া গেলে জিজ্ঞাসা করিলাম, তুমি কি খাবে গহর ? আমি ? আমার এক বুড়ে মাসী আছেন তিনিই রান্না করেন। সে যাক, খাওয়াদাওয়া চুকলে লেখাগুলো তোরে পড়ে শোনাব। সে আপন কাব্যের অম্বুধ্যানেই মগ্ন ছিল, অতিথির সুখ-সুবিধার কথা হয়ত চিস্তাও করে নাই ; কহিল, বিছানাটা পেতে ফেলি, কি বল ? রাত্তিরে দু’জনে একসঙ্গেই থাকব কেমন ? এ আর এক বিপদ। বলিলাম, না ভাই গহর, তুমি তোমার ঘরে শোও গে, আজ আমি বড় ক্লাস্ত, বই তোমার কাল সকালে শুনব । কাল সকালে ? তখন কি সময় হবে ? নিশ্চয় হবে । গহর চুপ করিয়া একটুখানি চিন্তা করিয়া বলিল, কিংবা একটা কাজ করলে হয় ন। শ্ৰীকান্ত ? আমি পড়ে যাই, তুমি গুয়ে গুয়ে শোনো। ঘুমিয়ে পড়লেই আমি উঠে যাবে, কি বলো ? এই বেশ মতলব,—না ? আমি মিনতি করিয়া বলিলাম-না ভাই গহর, তাতে তোমার বইয়ের মর্য্যাদা নষ্ট হবে। কাল আমি সমস্ত মন দিয়ে শুনব । গহর ক্ষুব্ধমূপে বিদায় লইল। কিন্তু বিদায় করিয়া নিজের মনটাও প্রসন্ন হইল न' ।।

  • >