পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত গাড়িতে অযাচিত প্যাড়া এবং দই খাওয়াইয়া আমাকে ত আচ্ছা ফালে ফেলিয়াছে! একটা ফাস কাটিতে আর একটা ফাসে জড়াইয়া পড়িলাম। পরিত্রাণের উপায় চিন্তা করিতে মাথা গরম হইয়া উঠিল এবং এই নিরীহ মেয়েটার প্রতি ক্রোধ ও বিরক্তির সীমা রহিল না। আর ঐ শয়তান ঠাকুর্দা । ইচ্ছা করিতে লাগিল লোকটা যেন না আর বাড়ি পৌছায়, রাস্তাতেই সগিৰ্ম্মি হইয়া মারা যায়। কিন্তু সে আশা ভিত্তিহীন, নিশ্চয় জানি, লোকটা কিছুতেই মরিবে না এবং একবার যখন আমার বাসার ঠিকানা জানিয়াছে, তখন আবার আসিবে এবং যেমন করিয়া পারে টাকা আদায় করিবে । হয়ত এবার সেই হাকিম পিসে মশায়কে সঙ্গে করিয়া আনিবে । এক উপায় —ষঃ পলায়তি। টিকিট কিনিতে গেলাম, কিন্তু জাহাজে স্থানাভাব-সমস্ত টিকিট পূৰ্ব্বারেই বিক্ৰী হইয়া গিয়াছে, সুতরাং পরের মেলের জন্য অপেক্ষা করিতে হইবে । সে ছয়-সাত দিনের ব্যাপার। আর-এক পন্থা বাসা বদল করা। ঠাকুর্দ না খুজিয়া পায়। কিন্তু এমন একটি ভালো জায়গা এত শীঘ্র পাওয়াই বা যায় কোথায় ? কিন্তু অবস্থা এমন দাড়াইয়াছে যে, ভালোমনার প্রশ্নই অবাস্তর—যথারণ্যং তথা গৃহমৃ–শিকারীর হাত হইতে প্রাণ বাচানোর দায় । ভয় ছিল আমার গোপন উদ্বেগটা পাছে রতনের চোখে পড়ে। কিন্তু বিপদ হইয়াছে তাহার নড়িবার গা নাই, কাশীর চেয়ে কলিকাতা তাহার বেশী মনে ধরিয়াছে। জিজ্ঞাসা করিলাম, চিঠির জবাব নিয়ে কি তুমি কালই যেতে চাইচ রতন । রতন তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল, আজ্ঞে না । আজ দুপুরে মাকে একখানা পোস্টকার্ড লিখে দিলাম, আমার দু’-পাচদিন দেরি হবে । মরা সোসাইটি, জ্যাস্ত সোসাইটি না দেখে আর ফিরচিনে। আবার কবে কোন্‌কালে আসা হবে তার কোন ঠিক নেই। বলিলাম, কিন্তু তিনি ত উদ্বিগ্ন হতে পারেন— আঞ্জে, না। গাড়ির ধকলটা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সে কথা লিখে দিয়েচি । কিন্তু চিঠির জবাবটা— আঞ্জে, দিন না। কালই রেজেস্ট্র করে পাঠিয়ে দেবোখন। সে-বাড়িতে মার চিঠি যমে খুলতেও সাহস করবে না। চুপ করিয়া বসিয়া রহিলাম। নাপিত ব্যাটার কাছে কোন ফন্দিই খাটল না। সব প্রস্তাবই নাকচ করিয়া দিল । যাবার সময় ঠাকুর্দী টাকার কথাটা প্রচার করিয়াই গিয়াছেন। তাহ চিত্ত্বের २१