পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ গিয়াছেন । রতন ঠিক সেই কথাই পাড়িল, বলিল, যদি কিছু মনে না করেন ত একটা কথা বলি বাবু। কি কথা রতন ? রতন একটু দ্বিধা করিয়া বলিল, আড়াই হাজার টাকা ত নিতান্ত তুচ্ছ নয় বাবু—ওরা কে যে ওদের মেয়ের বিয়েতে এতটা টাকা আপনি খামোক দান করবেন বললেন । তা ছাড়া, ঠাকুর্দাই হোক, আর ষাই হোক, বুড়োটা লোক ভাল নয়। ওকে বলাটা ভাল হয়নি বাবু। তাহার মস্তব্য শুনিয়া যেমন অনিৰ্ব্বচনীয় আনন্ম লাভ করিলাম, মনের মধ্যে তেমনি জোর পাইলাম—ইহাই চাহিতেছিলাম । তথাপি কণ্ঠস্বরে কিঞ্চিৎ সন্দেহের আভাস দিয়া কহিলাম, বলাটা ভাল হয়নি, না রতন ? রতন বলিল, নিশ্চয় ভালো হয়নি বাবু। টাকাটা ত কম নয়। তা ছাড়া, কিসের জন্য বলুন ত ? ঠিক ত কহিলাম, তাহলে না দিলেই হবে। রতন সবিস্ময়ে ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া কহিল, সে ছাড়বে কেন ? কহিলাম, না ছেড়ে করবে কি ? লেখাপড়া করে ত দিইনি। আর, তখন আমি এখানে থাকব কি বৰ্ম্মায় চলে যাবো, তাই বা কে জানে! রতন একমুহূৰ্ত্ত চুপ করিয়া থাকিয়া একটু হাসিল, বলিল, বুড়োকে আপনি চিনতে পারেননি বাবু, ওদের লজ-সরম মান-অপযান নেই। কেঙ্গে-কেটে ভিক্ষে করেই হোক, আর ভয় দেখিয়ে জুলুম করেই হোক, টাকা ও নেবেই । আপনার দেখা না পেলে মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে ও কাশী গিয়ে মার কাছ থেকে আদায় করে ছাড়বে | মা বড় লজ্জা পাবেন বার, ও মতলবে কাজ নেই। শুনিয়া নিস্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিলাম। রতন আমার চেয়ে ঢের বেশী বৃদ্ধিমান। অর্থহীন আকস্মিক করুণার হঠকারিতার জরিমানা আমাকেদিতেই হইবে। নিস্তার নাই। রতন পাড়াগায়ের ঠাকুর্দাকে যে চিনতে ভুল করে নাই, বুঝা গেল যখন চতুর্থ দিবসে তিনি ফিরিয়া আসিলেন । কেবল আশা করিয়াছিলাম এবার নিশ্চয় হাকিম পিসেমশাই সঙ্গে আসিবেন–কিন্তু একাই আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বলিলেন, দশখানা গ্রামের মধ্যে ধন্য ধন্য পড়ে গেছে দাদা, সবাই বলচে, কলিকালে এমন কখনো শোনা যায় না। গরীব ব্রাহ্মণের কন্যাদায় এভাবে উদ্ধার করে দিতে কেউ

  • ९b”