পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ করে বসল। আমি কিছুই জানতুম না, চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করলুম, মন্মথ কি টাকার বদলে রাজী হয়েচে নাকি ? আর বাবাও বিশ হাজার টাকা দিতে চেয়েচেন ? দাসী বললে, উপায় কি দিদিমণি? ব্যাপারটা সহজ নয়, প্রকাশ হয়ে পড়লে যে সমাজ-জাতকুল-মান সব যাবে। মন্মথ আসল কথাটা শেষকালে প্রকাশ করে দিলে, বললে, দায়ী ত সে নয়, দায়ী তার ভাইপো যতীন । সুতরাং বিনা দোষে যদি তাকে জাত দিতেই হয় ত বিশ হাজারের কমে পারবে না । তা ছাড়া, পরের ছেলের পিতৃত্ব স্বীকার করে নেওয়া— এ কি কম কঠিন । যতীন তার ঘরে বসে পড়ছিল, তাকে ডেকে এনে কথাটা শোনানো হ’লো । শুনে প্রথমটা সে হতবুদ্ধি হয়ে দাড়িয়ে রইল, তারপর বললে, মিছে কথা । পিতৃব্য মন্মথ গর্জন করে উঠল—পাজি নচ্ছার নেমকহারাম । যে লোক তোকে ভাতকাপড় দিয়ে কলেজে পড়িয়ে মানুষ করচে তুই তারই করলি সৰ্ব্বনাশ! কি কালসাপকেই না আমি মনিবের ঘরে ডেকে এনেছিলাম ! ভেবেছিলাম বাপ-ম-মরা ছেলে মানুষ হবে । ছিছি ! এই না বলে সে বুকে কপালে পটাপট করাঘাত করতে লাগল, বললে, এ-কথা উষা নিজের মুখে ব্যক্ত করেচে, আর তুই বলিস না ! যতীন চমকে উঠে বললে, উধাদিদি নিজে বলেচেন আমার নামে ? কিন্তু তিনি ত কথখনো মিথ্যে বলেন না—এত বড় মিথ্যে অপবাদ তার মুখ থেকে ত কিছুতেই বার হতে পারে না ! মন্মথ আর একবার গর্জন করে উঠল—ফেব্ৰু । তবু অস্বীকার করবি পাজী হতভাগা শয়তান ! জিজ্ঞেস কর তবে মনিবকে । তিনি কি বলেন শোন । কৰ্ত্ত সায় দিয়ে বললেন, হা । যতীন বললে, দিদি নিজে করেচেন আমার নাম ? কর্তা আবার ঘাড় নেড়ে বললেন, স্থা । বাবাকে সে দেবতা বলে জানত, এর পরে আর প্রতিবাদ করলে না, স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে আস্তে আস্তে চলে গেল। কি ভাবলে সেই জানে। রাত্রে কেউ তার খোজ করলে না । সকালে কে এসে তার খবর দিলে, সবাই ছুটে গিয়ে দেখলে আমাদের ভাঙা আস্তাবলের এককোণে যতীন গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলচে । বৈষ্ণবী কহিল, শাস্ত্রে ভাইপোর আত্মহত্যায় খুড়োর অশৌচ বিধি আছে কি না জানিনে গোসাই, হয়ত নেই, হয়ত ডুব দিয়ে শুদ্ধ হয়—সে যাই হোক, শুভদিন দিনকয়েক মাত্র পেছিয়ে গেল-তারপরে গঙ্গাস্নানে শুদ্ধ-শুচি হয়ে মন্মথর্গোসাই মালা-তিলক ধারণ করে অধিনীর পাপ-বিমোচনের শুভ-সঙ্কল্প নিয়ে নবদ্বীপে এসে অবতীর্ণ হলেন । 愈*