পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তারপরে আর জানিনে । বলিলাম তবে অার একটা কিছু গাও— বৈষ্ণবী তেমনি মুম্বুকণ্ঠে গাহিল— “চণ্ডিদাস বাণী গুন বিনোদিনী পীরিতি না কহে কথা, পীরিতি লাগিয়া পরাণ ছাড়িলে পীরিতি মিলায় তথা ।” এবারেও স্বামিলে বলিলাম, তারপরে ? বৈষ্ণবী কহিল, তারপরে আর নেই, এইখানেই শেষ । শেষই বটে ! দু’জনেই চুপ করিয়া রহিলাম। ভারী ইচ্ছা করতে লাগিল দ্রুতপদে পাশে গিয়া কিছু একটা বলিয়া এই অন্ধকার পথটা তাহার হাত ধরিয়া চলি । জানি সে রাগ করিবে না, বাধা দিবে না, কিন্তু কিছুতেই পাও চলিল না, মুখেও একটা কথা আসিল না, যেমন চলিতেছিলাম তেমনি ধীরে ধীরে নীরবে বনের বাহিরে আসিয়া পৌছিলাম। পথের ধারে বেড়া দিয়ে ঘেরা আশ্রমের ফুলের বাগান, ঠাকুরের নিত্যপূজার ৰোগান দেয়। খোলা জায়গায় অন্ধকার আর নাই, কিন্তু ফর্সাও তেমন হয় নাই । তথাপি দেখা গেল অজস্র ফুটন্ত মল্লিকায় সমস্ত বাগানটা যেন সাদা হইয়া আছে। সামনের পাতাঝরা স্তাড়া চাপা গাছটার ফুল নাই, কিন্তু কাছাকাছি কোথাও বোধ করি অসময়ে প্রস্ফুটিত গোটাকয়েক রজনীগন্ধার মধুর গন্ধে সে ক্রটি পূর্ণ হইয়াছে। জার সবচেয়ে মানাইয়াছে মাঝখানটায় । নিশাস্তের এই ঝাপা আলোতেও চেনা ষার শাখার পাতায় জঞ্জাজড়ি করিয়া গোট পাঁচ-ছয় স্থলপদ্মের গাছ-ফুলের সংখ্যা নাই—বিকশিত সহস্র আরক্ত আঁখি মেলিয়া বাগানের সকল দিকে তাহারা घ्राष्ट्रिब्रो बाटछ । কখনো এত প্রত্যুষে শয্যা ছাড়িয়া উঠি না, এমন সময়টা চিরদিন নিদ্রাচ্ছন্ন জড়তায় অচেতনে কাটিয়া যায়-জাজ কি ষে ভালো লাগিল তাহা বলিতে পারি না । পূৰ্ব্বে রক্তিম দিগন্তে জ্যোতিৰ্ম্ময়ের আভাস পাইতেছি, নিঃশব্দ মহিমার সকল আকাশ শাস্ত হইয়া আছে, আর ঐ লতাম্ব-পাতায় শোভায়-সোঁরঙে ফুলে-ফুলে পরিব্যাপ্ত সম্মুখের উপবন-সমস্ত মিলিয়া এ ষেন নিঃশেষিত রাত্রির বাক্যহীন বিষ্কারের অশ্রীক্ষদ্ধ ভাবা । করুণায়, মমতায় ও অযাচিত দাক্ষিণ্যে সমস্ত অন্তরটা আমার চক্ষুর নিমিযে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল—সহসা বলিয়া ফেলিলাম, কমললভা, জীবনে তুমি অনেক দুঃখ, অনেক ব্যথা পেস্কেচ, প্রার্থনা করি এবার যেন সুখী হও । Coo