পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত নবীনের কথাগুলো মনে মনে তোলাপাড়া করিতে অকস্মাৎ বিদ্যুৎৰেগে একটা সন্দেহ জাগিল—বৈষ্ণবী কিসের জন্য চলিয়া যাইতে চায় । সেই ভুরু-ওয়ালা কদাকার লোকটার কঠিবদল-করা স্বামিত্বের হাঙ্গামার ভয়ে কদাচ নয়—এ গহর। এখানে আমার থাকার সম্বন্ধে তাই বোধ করি বৈষ্ণবী সেদিন কৌতুকে বলিয়াছিল, আমি ধরে রাখলে সে রাগ করবে না গোসাই । রাগ করবার লোক সে নয়, কিন্তু কেন সে আর আসে না ? হয়ত বা নিজের মনে মনে কি কথা সে ভাবিয়া লইয়াছে। সংসারে গহরের আসক্তি নাই, আপন বলিতেও কেহ নাই ! টাকা-কড়ি বিষয়-আশয় সে যেন বিলাইয় দিতে পারিলেই বাচে। ভালো যদি সে বাসিয়াও থাকে, মুখ ফুটিয়া কোনদিন হয়ত সে বলিবেও না । কোথাও পাছে কোন অপরাধ স্পর্শে । বৈষ্ণবী ইহা জানে। সেই অনতিক্রম্য বাধায় চিরনিরুদ্ধ প্রণয়ের নিষ্ফল চিত্তদাহ হইতে এই শাস্ত আত্মভোলা মানুষটিকে অব্যাহতি দিতেই বোধ করি কমললতা পলাইতে চায়। নবীন চলিয়া গিয়াছে, বকুলতলায় সেই ভাঙা বৌটার উপরে একলা বসিয়া ভাবিতেছি । ঘড়ি খুলিয়া দেখিলাম পাচটার গাড়ি ধরিতে গেলে দেরি করা আর চলে না। কিন্তু প্রতিদিন না যাওয়াটাই এমনি অভ্যাসে দাড়াইয়াছিল যে, ব্যস্ত হইয়া উঠিব কি আজও মন পিছু হটতে লাগিল। যেখানেই থাকি পুটুর বৌভাতে অল্পগ্রহণ করিয়া যাইব কথা দিয়াছিলাম। নিরুদ্দিষ্ট গহরের তত্ত্ব লওয়া আমার কৰ্ত্তব্য । এতদিন অনাবশ্যক অনুরোধ অনেক মানিয়াছি, কিন্তু আজ সত্যকার কারণ যখন বিদ্যমান তখন মানা করিবার কেহ নাই । দেখি পদ্মা আসিতেছে। কাছে আসিয়া কহিল, তোমাকে দিদি একবার ডাকচে গোসাই । - আবার ফিরিয়া আসিলাম। প্রাঙ্গণে দাড়াইয়া বৈষ্ণবী কহিল, কলকাতার বাসায় পৌঁছতে তোমার রাত হবে নতুনগোঁসাই। ঠাকুরের প্রসাদ দুইটি সাজিয়ে রেখেচি, ঘরে এসে । প্রত্যহের মতই সযত্ন আয়োজন। বসিয়া গেলাম। এখানে খাবার জন্য পীড়াপীড়ি করার প্রথা নাই, আবখ্যক হইলে চাহিয়া লইতে হয় । উচ্ছিষ্ট ফেলিয়া রাখা চলে मी ! যাবার সময়ে বৈষ্ণবী কহিল, নতুনগোসাই, আবার আসবে ত ? তুমি থাকবে ত ? তুমি বলো কতদিন আমাকে থাকতে হবে ? তুমিও বলো কতদিনে আমাকে আসতে হবে ? না, সে তোমাকে আমি বলধ না । না বলো অন্য একটা কথার জবাব দেবে ? ሣ ©