পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত গঙ্গার মান করে অন্নপূর্ণার মন্দিরে দাড়িয়ে বললুম, মা, চিঠিখান সময় থাকতে যেন র্তার হাতে পড়ে। আমাকে আত্মহত্যা করে না মরুতে হয় । আমার মুখের পানে চাহিয়া বলিল, আমাকে এমন করে বেঁধেছিলে কেন বলো ত ? সহসা জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে পারিলাম না। তারপর বলিলাম, এ তোমাদের মেয়েদেরই সম্ভব। এ আমরা ভাবতেও পারিনে, বুঝতেও পারিনে ! স্বীকার করো ? করি। রাজলক্ষ্মী পুনরায় একমুহূৰ্ত্ত জামার প্রতি চাহিয়া থাকিয়া কছিল, সত্যিই বিশ্বাস করে ? এ আমাদেরই সম্ভব, পুরুষে সত্যিই এ পারে না । কিছুক্ষণ পৰ্য্যস্ত উভয়েই স্তব্ধ হইয়া রহিলাম। রাজলক্ষ্মী কহিল, মন্দির থেকে বেরিয়ে দেখি আমাদের পাটনার লছমন সাউ । আমাকে সে বারাণসী কাপড় বিক্ৰী করত। বুড়ো আমাকে বড়ো ভালোবাসত, আমাকে বেটী বলে ডাকত। আশ্চৰ্য্য হয়ে ৰললে, বেট, আপ ইহা ? তার কলকাতার দোকান ছিল জানতুম, বললুম, সাউজী, আমি কলকাতায় যাব, আমাকে একটি বাড়ি ঠিক করে দিতে পার ? সে বললে, পারি। বাঙালীপাড়ায় তার নিজেরই একথানা বাড়ি ছিল, সস্তায় কিনেছিল ; বললে, চাও ত বাড়িটা আমি সেই টাকাতেই তোমাকে দিতে পারি। সাউজী ধৰ্ম্মভীরু লোক, তার উপর আমার বিশ্বাস ছিল, রাজী হয়ে তাকে বাড়িতে ডেকে এনে টাকা বিলুম, সে রসিদ লিখে দিলে। তারই লোকজন এসব জিনিসপত্র কিনে দিয়েচে । ছ’-সাতদিন পরেই রতনদের সঙ্গে নিয়ে এখানে চলে এলুম, মনে মনে বললুম, অন্নপূর্ণ, দয়া তুমি আমাকে করেচ, নইলে এ সুযোগ কখনো ঘটত না । দেখা তার আমি পাবই। এই ত দেখা পেলুম। বলিলাম, কিন্তু আমাকে যে শীঘ্রই বৰ্ম্মা যেতে হবে লক্ষ্মী । রাজলক্ষ্মী বলিল, বেণ ত চল না। সেখানে অভয়া আছেন, দেশময় বুদ্ধদেবের বড় বড় মন্দির আছে –এসব দেখতে পাব। কহিলাম, কিন্তু সে বড় নোঙর দেশ লক্ষ্মী, গুচিবায়ুগ্ৰন্তদের বিচার-আচার থাকে না—সে দেশে তুমি যাবে কি করে ? রাজলক্ষ্মী আমার কানের উপর মুখ রাখিয়া চুপি চুপি কি একটা কৰা বলিল, ভালো বুঝিতে পারিলাম না। বলিলাম, আর একটু চেচিয়ে বলে শুনি । রাজলক্ষ্মী বলিল, না । তারপর অসাড়ের মত তেমনিভাবেই পড়িয়া রহিল। শুধু তাহার উষ্ণ দ্বন নিশ্বাস আমার গলার উপরে, গালের উপরে জাসিয়া পড়িতে লাগিল । Եր* sप{~-२२