পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ পরিত্যাগ করিতে চাহেনা, তাহা আমি ভাবিয়া পাইলাম না বটে, কিন্তু তাহার অন্তৰ্য্যামীর অগোচর ছিল না যে, যে হতভাগ্যের গৃহের পথ পৰ্য্যস্ত রুদ্ধ হইয়া গেছে, তাহাকে এই শূন্ত ঘরের পুঞ্জীভূত বেদনা যদি খাড়া রাখিতে না পারে, ত ধুলিসাৎ হইতে নিবারণ করিবার সাধ্য সংসারে আর কাহারও নাই । বাসায় পৌঁছিতে একটু রাত্রি হইল। ঘরে ঢুকিয়া দেখি, এক কোণে বিছানা পাতিয়া কে একজন আগা-গোড়া মুড়ি দিয়া পড়িয়া আছে। ঝিকে জিজ্ঞাসা করায় কহিল, ভদ্রলোক । তাই আমার ঘরে ! আহারাদির পরে এই ভদ্রলোকটির সহিত আলাপ হইল। তাহার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়। বছর-চারেক পরে নিরুদিষ্ট ছোট ভাইয়ের সন্ধান মিলিয়াছে। তাহাকেই ঘরে ফিরাইবার জন্য নিজে আসিয়াছেন। তিনি বলিলেন, মশাই, গল্পে শুনি, আগে কামরূপের মেয়ের বিদেশী পুরুষদের ভেড়া ক’রে ধরে রাখত। কি জানি, সে-কালে তারা কি করত ; কিন্তু এ-কালে বৰ্ম্ম-মেয়েদের ক্ষমতা যে তার চেয়ে এক তিল কম নয়, সে আমি হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছি। আরও অনেক কথা কহিয়া, তিনি ছোট ভাইকে উদ্ধার করিতে আমার সাহায্য ভিক্ষা করিলেন। তাহার এই সাধু উদ্বেগু সফল করিতে আমি কোমর বাধিয়া লাগিব, কথা দিলাম। কেন, তাহা বলাই বাহুল্য। পরদিন সকালে সন্ধান করিয়া ছোট-ভাইয়ের বর্মী-শ্বশুরবাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইলাম, বড় ভাই আড়ালে রাস্তার উপর পায়চারি করিতে লাগিলেন। ছোট ভাই উপস্থিত ছিলেন না, সাইকেল করিয়া প্রাতঃভ্রমণে নিষ্ক্রান্ত হইয়াছিলেন। বাড়িতে শ্বশুর-শাশুড়ী নাই, শুধু স্ত্রী তাহার একটি ছোট বোন লইয়া এবং জন-দুই দাসী লইয়া বাস করে। ইহাদের জীবিকা বর্ম-চুরুট তৈরি করা। তখন সকালে সবাই এই কাজেই ব্যাপৃত ছিল। আমাকে বাঙালী দেখিয়া এবং সম্ভবতঃ তাহার স্বামীর বন্ধু ভাবিয়া সমাদরের সহিত গ্রহণ করিল। ব্ৰহ্ম-রমণীরা অত্যন্ত পরিশ্রমী ; কিন্তু পুরুষেরা তেমনি অলস ; ঘরের কাজ-কৰ্ম্ম হইতে শুরু করিয়া বাহিরের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় সমস্তই মেয়েদের হাতে। তাই লেখাপড় তাহাজের না, শিখিলেই নয়। কিন্তু পুরুষদের আলাদা কথা। শিখিলে ভাল, না শিখিলেও লজ্জায় সারা হইতে হয় না। নিষ্কর্ম পুরুষ স্ত্রীর উপার্জনের অন্ন বাড়িতে ধ্বংস করিয়া বাহিরে তাহারই পয়সায় বাবুয়ানা করিয়া বেড়াইলে, লোকে আশ্চর্ঘ্য হয় না। স্ত্রীরাও ছি-ছি করিয়া, ঘ্যানধান, প্যানপ্যান করিয়া অতিষ্ঠ করিয়া তোলা আবশ্বক মনে করে না । বরঞ্চ ইহাই কতকটা যেন তাহাজের সমাজে স্বাভাবিক আচার বলিয়া স্থির হুইয়া গেছে।