পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ভাল হলে আবার যেমন মেলা-মেশা, সব তেমনি । মশাই, কারুর ঝঞ্জাটের মধ্যে কখনো যেতে নাই । অফিসের বেলা হইয়াছে বলিয়া উঠিয়া পড়িলাম। এই প্রাঞ্জের সাধু-পরামর্শের বলে এতটা বয়সে যে খুব বেশী মানসিক উন্নতি হওয়া আমার সম্ভবপর, তাহা নহে। এমন কি মনের মধ্যে খুব বেশী আন্দোলনও উঠিল না। কারণ, এরূপ বিজ্ঞ ব্যক্তির একান্ত অভাব পল্লীগ্রামেও অনুভব করি নাই, এবং অপরাপর দুর্নাম তাঁহাদের যতই থাকুক, পরামর্শ দিতে কার্পণ্য করেন, এ অপবাদও শুনি নাই, এবং এ পরামর্শ যে স্বপরামর্শ তা সামাজিক জীবনে তত না হোক, পারিবারিক জীবনে, জীবন-যাত্রার কাৰ্য্যে যে অবিসংবাদ সাধু উপায়, তাহা দেশের লোক মানিয়া লইয়াছে। বাঙালী গৃহস্থ-ঘরের কোন ছেলে যদি অক্ষরে অক্ষরে ইহা প্রতিপালন করিয়া চলে তাহাতে বাপ-মা অসন্তুষ্ট হন—বাঙালী পিতামাতার বিরুদ্ধে এত বড় মিথ্যা বদনাম রটনা করিতে পুলিশের সি. আই. ডি-র লোকেরও বোধ করি বিবেকে বাধে। সে যাই হোক, কিন্তু এই প্রাজ্ঞতার ভিতরে যে কত বড অপরাধ ছিল, সপ্তাহ-দুই গত না হইতেই, ভগবান ইহারই সাহায্যে আমার কাছে প্রমাণ করিয়া দিলেন! সেই অবধি অভয়ার বাড়ির দিকে আর যাই নাই। তাহার সমস্ত অবস্থার সহিত তাহার কথাগুলি মিলাইয়া লইয়া আগাগোড়া জিনিসটা জ্ঞানের দ্বারা একরকম করিয়া দেখিতে পারিতাম সে-কথা সত্য। তাহার চিন্তার স্বাধীনতা, তাহার আচরণের নির্ভীক সততা, তাহাদের পরস্পরের অপরূপ ও অসাধারণ স্নেহ আমার বুদ্ধিকে সেইদিকে নিরস্তর আকর্ষণ করিত, ইহাও ঠিক, কিন্তু তবুও আমার আজন্মের সংস্কার কিছুতেই সেদিকে পা বাড়াইতে চাহিত না। কেবলই মনে হইত, আমার অন্নদাদিদি এ কাজ করিতেন না। কোথাও দাসীবৃত্তি করিয়া লাঞ্ছনা, অপমান, দুঃখের ভিতর দিয়াও বরঞ্চ তার বাকী জীবনটা কাটাইয়া দিতেন ; কিন্তু ব্ৰহ্মাণ্ডের সমস্ত স্বখের পরিবর্তেও—যাহার সহিত র্তাহার বিবাহ হয় নাই—তাহার সহিত ঘর করিতে রাজী হইতেন না ! আমি জানিতাম, তিনি ভগবানে একান্তভাবে আত্মসমর্পণ করিয়াছিলেন । র্তাহার সেই সাধনার ভিতর দিয়া তিনি পবিত্রতার যে ধারণ, কৰ্ত্তব্যের যে জ্ঞানটুকু লাভ করিয়াছিলেন,—সে কি অভয়ার স্বতীয় বুদ্ধির মীমাংসার কাছে একেবারে ছেলেখেলা ? অভয়ার একটা কথা হঠাৎ মনে পড়িল। তখন ভাল করিয়া সেটা তলাইয়া বুঝিবার অবকাশ পাই নাই। সেদিন সে কহিয়াছিল, শ্ৰীকান্তবাবু, দুখ-ভোগ করার মধ্যে একটা মারাত্মক মোহ আছে। মানুষ বহুযুগের জীবনযাত্রায় এটা দেখিয়াছে যে, কোন বড় ফলই বড় রকম দুঃখ-ভোগ ছাড়া পাওয়া যায় না। তার জন্ম-জন্মান্তরের অভিজ্ঞতা আজ এই ভ্রমটাকে একেবারে সত্য বলিয়া জানিয়াছে যে, জীবনের brషి