পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ হওয়ার বার্তা পাইয়াও যে নারীর মুখ অহঙ্কারে উজ্জল হইয়া উঠে না, বরঞ্চ নিবিড় কালিমায় আচ্ছন্ন হষ্টয়া যায়, সে যে তাহার কি অবস্থা, সে কথা বুঝিবার শক্তি বেণীর নাই। তা না থাকুক, কিন্তু জিনিসটা এতই স্পষ্ট যে কাহারও দৃষ্টি এড়াইবার সম্ভাবনা ছিল না—তাহারও এড়াইল না। মনে মনে একটু বিস্ময়াপন্ন হইয়াই বেণী রান্নাঘরে যাইয়া মাসীর সহিত দুই-একটা কথা কহিয়া বাড়ি ফিরিতেছিল, রমা হাত নাড়িয়া তাহাকে কাছে ডাকিয়া মৃদুস্বরে কহিল, আচ্ছা বড়দা, রমেশদ যদি জেলেই যান, সে কি আমাদের নিজেদের ভারী কলঙ্কের কথা নয় ? বেণী অধিকতর আশ্চৰ্য্য হইয়া জিজ্ঞাস করিলেন, কেন ? রম কহিল, আমাদের আত্মীয়, আমরা যদি না বঁাচাই, সমস্ত লোক আমাদেরই ত ছি-ছি করবে। বেণী জবাব দিল, যে যেমন কাজ করবে সে তার ফল ভুগবে, আমাদের কি ? রমাতেমনি মৃত্নকণ্ঠে কহিল, কিন্তু রমেশদ সত্যিই ত আর চুরি-ডাকাতি করে বেড়ান না, বরং পরের ভালর জন্যেই নিজের সর্বস্ব দিচ্চেন, সে কথা ত কারো কাছে চাপ থাকবে না। তার পর আমাদের নিজেদেরও ত গায়ের মধ্যে মুখ বার করতে হবে । বেণী হি-হি করিয়া খুব খানিকট হাসিয়া লইয়া কহিল, তোয় হ’ল কি বলত বোন ? রমা এই লোকটার সঙ্গে রমেশের মুখখান মনে মনে একবার দেখিয়া লইয়া আর যেন সোজা করিয়া মাথা তুলিতেই পারিল না। কহিল, গায়ের লোক ভয়ে মুখের সামনে কিছু না বলুক, আড়ালে বলবেই , তুমি বলবে, আড়ালে রাজার মাকেও ডান বলে, কিন্তু ভগবান ত আছেন । নিরপরাধীকে মিছে করে শাস্তি দেওয়ালে তিনি ত রেহাই দেবেন না। বেণী কৃত্রিম ক্ষোত প্রকাশ করিয়া কহিল, হা রে জামার কপাল ! সে ছোড়া বুঝি ঠাকুর-দেবতা কিছু মানে ? শীতলাঠাকুরের ঘরট পড়ে যাচ্ছে—মেরামত করবার জন্যে তার কাছে লোক পাঠাতে সে হাকিয়ে দিয়ে বলেছিল, যারা তোমাদের পাঠিয়েচে তাদের বল গে, বাজে খরচ করবার টাকা আমার নেই। শোন কথা ! এটা তার কাছে বাজে খরচ ? আর কাজের খরচ হচ্ছে মোচলমানদের ইস্কুল করে দেওয়া । তা ছাড়া বামুনের ছেলে—সন্ধ্যে-আহ্নিক কিছু করে না। শুনি মোচলমানের হাতে জল পৰ্য্যন্ত খায়। ছুপাতা ইংরাজী পড়ে আর কি তার জাত-জন্ম আছে দিদি– কিছুই নেই। শান্তি তার গেছে কোথা, সমস্তই তোলা আছে। সে একদিন সবাই দেখতে পাবে। রম আর বাদাম্বুবাদ না করিয়া মৌন হইয়া রহিল বটে, কিন্তু রমেশের অনাচার 3е в