পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লী-সমাজ ভৈরব তাহাকেই বাদ দিতে পারে। তাই নিজের এই অদ্ভূত আশঙ্কায় নিজেই লজ্জিত হইয়া রমেশ তখনষ্ট একটা চাদর কাধে ফেলিয়া একেবারে সোজা আচার্ধ্য-পাড়ির উদ্দেশে বাহির হইয়া পড়িল । বাহির হইতেই দেখিতে পাইল, বেড়ার ধারে দুই-তিনটা গ্রামের কুকুর জড় হইয়া এটাে কলাপাত লইয়া বিবাদ করিতেছে এবং অনতিদূরে রোশনচোঁকি-ওয়ালারা আগুন জালাইয়া তামাক খাইতেছে এবং বাদ্যভাণ্ড উত্তপ্ত করিতেছে। ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখিল উঠানে শতছিন্দ্রযুক্ত সামিয়ানা খাটানো এবং সমস্ত গ্রামের সম্বল পাঁচ-ছয়টা কেরোলিনের বহু পুরাতন বাতি মুখুয্যে ও ঘোষালবাটী হইতে চাহিমা আনিয়া জালানো হইয়াছে। তাহারা স্বল্প-আলোক এবং অপৰ্যাপ্ত ধূম উদগীৰণ করিয়া সমস্ত স্থানটাকে দুৰ্গদ্ধে পরিপূর্ণ করিয়৷ দিয়াছে। খাওয়ানো সমাধা হইয়া গিয়াছিল—বেশী লোক আব ছিল না। পাড়ার মুরুব্বিরা তখন যাই যাই করিতেছিলেন এবং ধর্শদাস হরিহর রায়কে আরও একটুখানি বসিতে পীড়াপীড়ি করিতেছিলেন। গোবিন্দ গাজুলী একটুখানি সরিয়া বসিয়া কে একজন চাষার ছেলের সহিত নিরিবিলি আলাপে রত ছিলেন। এমনি সময়ে রমেশ দুঃস্বপ্নের মত একেবারে প্রাঙ্গণের বুকের মাঝখানে জাসিযা দাড়াইল । তাহাকে দেখিবামাত্র হহাদের মূখও যেন এক মুহূর্তে মসীবর্ণ হইয়া গেল, শত্রুপক্ষীয় এই দুইটা লোককে এই বাটতেই এমন ভাবে যোগ দিতে দেখিয়া রমেশের মুখও উজ্জল হইয়া উঠিল না। কেহই তাহাকে অভ্যর্থনা করিয়া বসাইতে অগ্রসর হইল না—এমন কি, একটা কথা পৰ্য্যন্ত কহিল না। ভৈরব নিজে সেখানে ছিল না। খানিক পরে সে বাটীর ভিতর হইতে কি একটা কাজে—বলি গোবিন্দ, বলিয়া বাহির হইয়াই উঠানের মাঝখানে যেন ভূত দেখিতে পাছল এবং পরক্ষণেই ছুটিয়া বাটীর ভিতরে ঢুকিয়া পড়িল। রমেশ শুদ্ধমুখে একাকী যখন বাহির হইয়া আসিল, তখন প্রচণ্ড বিস্ময়ে তাহার মন অসাড় হইয়া গিয়াছিল। পিছনে ডাক শুনিল, বাবা রমেশ । ফিরিয়া দেখিল দী হন হন করিয়া আসিতেছে । বছে আসিয়া কহিল, চল বাবা, বাড়ি চল । রমেশ একটুখানি হাসিবার চেষ্টা করিল মাত্র। চলিতে চলিতে দৗম্বু বলিতে লাগিল, তুমি ওর যে উপকার করেচ বাবা, সে ওর বাপমা করত না। এ কথা সবাই জানে, কিন্তু উপায় ত নেই। কাচ্চাবাচ্চ নিয়ে আমাদের সকলেরই ঘর করতে হয় ; তাই তোমাকে নেমস্তন্ন করতে গেলে—বুঝলে না বাবাভৈরবকেও নেহাত দোষ দেওয়া যায় না—তোমরা সব আজকালকার শহরের ছেলে— জাত-টাত তেমন ত কিছু মানতে চাও না—তাতেই বুঝলে না বাবা—দুদিন পরে, ওর ছোটমেয়েটিও প্রায় বারো বছরের হ’ল ত—পার করতে হবে ত বাবা ? আমাদের সমাজের কথা সবই জান বাবা-বুঝলে না বাবা— ३०é