পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সহিত জড়িত আছে। ভবিষ্যতে পুলিশ যেন তাহার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখে, তিনি এ মন্তব্য প্রকাশ করিতেও ছাড়েন নাই। বেশী সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রয়োজন হয় নাই, তবে রমাকে সাক্ষ্য দিতে হইয়াছিল। সে কহিয়াছিল, রমেশ বাড়ি ঢুকিয়া আচাৰ্য্য মহাশয়কে মারিতে আসিয়াছিল, তাহা সে জানে। কিন্তু ছুরি মারিয়াছিল কি না জানে না, হাতে তাহার ছুরি ছিল কি না, তাহাও স্মরণ হয় না। কিন্তু এই কি সত্য ? জেলার বিচারালয়ে হলফ করিয়া রমা এই সত্য বলিয়া আসিল ; কিন্তু যে বিচারালয়ে হলফ করার প্রথা নাই, সেখানে সে কি জবাব দিবে ! তাহার অপেক্ষ কে অধিক নিঃসংশয়ে জানিত, ছুরিও মারে নাই, হাতে তাহার অস্ত্র থাকা ত দূরের কথা একটা তৃণ পর্য্যস্ত ছিল না । সে আদালতে ও-কথাত কেহ তাহাকে জিজ্ঞাসা পর্য্যন্ত করিবে না—সে কি স্মরণ করিতে পারে এবং কি পারে না ! কিন্তু এখানকার আদালতে সত্য বলিবার যে তাহার এতটুকু পথ ছিল না! বেণী প্রভৃতির হাত-ধরা পল্লী-সমাজ সত্য চাহে নাই। সুতরাং সত্যের মূল্যে তাহাকে যে মিথ্যা অপবাদের গাঢ় কালি নিজের মুখময় মাখিয়া এই সমাজের বাহিরে আসিয়া দাড়াইতে হইবে—এমন ত অনেককেই করিতে হইয়াছে—এ কথা সে যে নিঃসংশয়ে জানিত । তা ছাড়া এত বড় গুরুদণ্ডের কথা রমা স্বপ্নেও কল্পনা করে নাই। বড় জোর দুশ'-একশ’ জরিমানা হইবে ইহাই জানিত। বরঞ্চ বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও রমেশ যখন তাহার কাজ ছাড়িয়া কোনমতেই পলাইতে স্বীকার করে নাই, তখন রাগ করিয়া রমা মনে মনে এ কামনাও করিয়াছিল, হোক জরিমানা । একবার শিক্ষা হইয়া যাক । কিন্তু সে শিক্ষা যে এমন করিয়া হইবে, রমেশের রোগক্লিষ্ট পাণ্ডুর মুখের প্রতি চাহিয়াও বিচারকের দয়া হইবে ন— একেবারে ছয় মাস সভ্রম কারাবাসের হুকুম করিয়া দিবে - তাক সে ভাবে নাই । সেই সময়ে রমা নিজে রমেশের দিকে চাহিয়৷ দেখিতে পারে নাই। পরের মুখে শুনিয়াছিল, রমেশ একদৃষ্টি তাঁহারই মুখের পানে চাহিয়াছিল এবং কিছুতেই তাহাকে জেরা করিতে দেয় নাই এবং জেলের হুকুম হইয়া গেলে গোপাল সরকারের প্রার্থনার উত্তরে মাথ নাড়িয়া কহিয়াছিল, না। ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে সারাজীবন কারারুদ্ধ করবার হুকুম দিলেও আমি আপিল করে খালাস পেতে চাইনে । বোধ করি, জেল এর চেয়ে ভাল । ভালই ত। তাহাদের চিরায়ুগত ভৈরব আচাৰ্য্য মিথ্যা নালিশ করিয়া যখন তাহার ঋণ শোধ করিল এবং রম সাক্ষ্য-মঞ্চে দাড়াইয়া স্মরণ করিতে পারিল না তাহার হাতে ছুরি ছিল কি না, তখন আপিল করিয়া মুক্তি চাহিবে সে কিসের জন্ত ! তাহার সেই দুর্জয় অভিমান বিরাট পাষাণখণ্ডের মত রমার বুকের উপর চাপিয়৷ বসিয়া আছে—কোথাও তাঁহাকে লে নড়াইয়া রাখিবার স্থান পাইতেছে না । লে ፵ »ቆ