পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨oo গল্প-গ্রন্থাবলী ও বন্ধিমতী মেয়ে আমাদের জাতির মধ্যে নিতান্ত দলভ, এ কথা আমি বলিলে হয় ত জাঁক করা হইবে; কিন্তু না বলিলে সত্যের অপলাপ হইবে ইহা নিশ্চয়। খাজনার জমি আমাদের যাহা ছিল, তাহার অধিকাংশই ভাগে দেওয়া ছিল। অলপ কয়েক বিঘা, বাবা “কৃষাণ” রাখিয়া চাষ করাইতেন। বলিতেন, খোকা পাস করিয়া যখন চাকরি-বাকরি করিবে, তখন সে জমিগুলাও তিনি ভাগে বিলি করিয়া দিবেন। কিন্তু তাঁর এত সাধের খোকার পাস করা তিনি ত দেখিয়া বাইতে পারিলেন না! দই বছর পবোঁ অলপ কয়েক দিনের ব্যবধানে তিনি ও আমার জননী বগারোহণ করিয়া | বাইশ বৎসর ধয়সেই আমাব পাস করিবার কথা, কিন্তু উপষমপিরি দুইবার ফেল হওয়ায় বয়সটা একট অধিক হইয়া পড়িয়াছিল। পসের সংবাদ পাইয়া আমি পঠিা বলি দিয়া কালীমন্দিরে পজা দিলাম ; বন্ধবোন্ধবকে নিমন্ত্রণ করিয়া, লচিমাংস ভোজন করাইলাম। সে দিন বড় আনন্দ হইয়াছিল। আবার বাবার কথা মনে পড়িয়া চোখে জলও আসিয়াছিল। ঃপর চাকরির উপায় চিন্তা করিতে লাগিলাম। নিজ চাষের জমিগুলি বাবার মৃত্যুর পরেই আমি ভাগে বিলি করিয়া দিয়াছিলাম; চাষবাস দেখিতে হইলে আর পড়াশনা হয় না। এখন চাকরি কোথায় পাই ? এ পল্লীগ্রামে চাকরি আমায় কে দিবে ? বউ বলিল, “আমায় বাপের বাড়ী রেখে, দুগণ শ্রীহরি বলে তুমি বেরিয়ে পড়, কলকাতায় যাও । এত বিদ্যে শিখেছ, সেখানে গেলে তোমার চাকরিব ভাবনা কি ? চাকরি হ'লে একটা ছোট দেখে বাসা ভাড়া কবে আমায় এসে নিয়ে যেও।” এ যুক্তির সারবত্তা বুঝিতে পারিলাম। সদ্যগোপের ঘরের মেয়ে, তায় কুড়ি বৎসর মাত্র বয়স, মন্দার বন্ধি দেখিযা সত্যই সময়ে সময়ে বিস্মিত হইয়া যাই। কিন্তু বড় সব্বনেশে কথা ষে । সাত আট বৎসরকাল একাদিক্ৰমে দুইজনে একসঙ্গে রহিয়াছি। গ্রামেই শ্বশুরবাড়ী, বউ বাপের বাড়ী গেলেও, দুইজনের বিচ্ছেদ ঘটে নাই। তাহাকে ছাড়িযা কলিকাতায় যাইতে হইবে ভাবিয়া প্রাণটা কেমন করিয়া উঠিল। তার হাতের বান্নাটি আমার যেমন মিটি লাগে, কই, আর কাহারও রান্না ত তেমন লাগে না ! সে কাছে বসিয়া না খাওয়াইলে আমার যে খাইয়ারই সুখ হয় না। তাব হাতের সাজা পাণ না হইলে পাণ খাইয়া আমার তৃপ্তি হয় না ;–কত লোকের বাড়ী বেড়াইতে ষাই, তারা পাণ দেয়, খাই ত ! সে কাছে থাকিবে না, শয়ন করিলে আমার পায়ে হাত বলাইয়া দিবে নাr আমার ঘমে আসিবে কি করিয়া : এই সাত আট বৎসর কাল, প্রতিদিন প্রাতে ঘমে হইতে উঠিয়া তার মুখখনি দেখিযাছি—দিন ত এতকাল এক রকম সুখেই কাটিয়াছে। কলিকাতায় প্রভাতে উঠিয়া কার মুখ দেখিব –তার পর ট্রাম হইতেই পড়িয়া যাইব, না গন্ডার ছরণীতেই প্রাণ হারাইব, কে বলিতে পারে ? বউয়ের প্রস্তাব শুনিয়া এই সকল কথাই আমি মনে মনে আলোচনা করিতেছিলাম, সে আমাকে চিন্তান্বিত দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল. আত কি ভাবছ গা ? কলকাতায় ষেতে বলেছি বলে রাগ হ’ল বুঝি ?” বলিলাম, "না, রাগ হবে কেন ?” “তবে ? মুখখানি অমন করে রয়েছ যে ?” খোলাখুলি বলিয়াই ফেললাম। জানি, ইহা শুনিয়া তাহার দেমাক বাড়িবে—তা বাড়ে বাড়কেগে বলিলাম, তোমায় ছেড়ে একলা আমি কলকাতায় কি করে থাকবো, ठाई छार्याछ् !” একথা শুনিয়া তাহার মুখখানি প্রসন্ন হইল। মিন্টস্বরে বলিল, “তা কি করবে বল ? পরিষে-মানুষ হয়ে যখন জন্মেছ, তখন এ সব কট না সইলে চলবে কেন ?