পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RSS গল্প-গ্রন্থাবলী অবশেষে বউ বলিল, “দেখ, বলা যাবে, তোমার যেখানে চাকরি হয়েছে, সেই মানবের মেয়ে। চিরকাল কলকাতায় মানুষ, কখনও পাড়া-গাঁ দেখেনি, তাই পাড়া-গাঁ দেখতে এসেছে। কাল সকালে উঠেই ওকে আমি শিখিয়ে পড়িয়ে ঠিক করে নেবো।“ বধির তারিফ করিলাম। বাস্তবিক, সদগোপের ঘরের মেয়ে, তায় মোটে ১৮ বছর বয়স, এরপ তীক্ষাবধি সচরাচর দেখিতে পাওয়া যায় না। বউয়ের সঙ্গে হিরণের খব ভাব হইয়া গেল। প্রথম দিন হইতেই হিরণ মন্দাকে বউদিদি সম্বোধন করিতেছিল। দিন পনেলো পরে একদিন প্রভাতে উঠিয়া দেখি, বাড়ীর চারিদিকে পলিস ঘেরাও করিয়াছে। কলিকাতা হইতে ডিটেকটিভ ইনপেক্টর আসিয়াছে। ওয়ারেটের বলে তাহারা হিরণকে এবং আমাকে গ্রেপ্তার করিয়া কলিকাতায় লইয়া চলিল। হিরণের জন্য পাকীর বন্দোবসত তাহারা পাবেই করিয়া রাখিয়াছিল। সাত পরদিন বেলা ১০টার সময় তাহারা আমাদিগকে লালবাজারে আনিয়া এক বাঙ্গালী ডেপুটী কমিশনরের নিকট হাজির করিল। ডেপুটী কমিশনরবাব আমায় প্রশ্ন করিতে লাগিলেন; আমি আমলে বক্তাত সমস্তই খোলাখুলি বলিয়া দিলাম। একজন দেশীয় করদ নাপতি এ ব্যাপারে জড়িত শনিয়া বাবটি কিয়ৎক্ষণ হতভম্ব হইয়া বসিয়া রহিলেন। তার পর তিনি উঠিয়া গেলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে আমাদিগকে অন্য কামরায় এক সাহেবের ঘরে যাইতে হইল। পরে শনিয়াছি, তিনিই স্বয়ং পলিস কমিশনর। সাহেব আমায় পঙ্খোনুপুঙ্খরুপে প্রশন করিতে লাগিলেন। আমি সমস্তই আবার তাঁহাকে বলিলাম। নবাবসাহেব ও পিয়ারী সুতীক্ষক বিষয় আমি কেমন করিয়া জানিতে পারিয়াছিলাম, তাহা সমস্ত | -- কমিশনর সাহেব উঠিয়া কোথায় চলিয়া গেলেন। তারপর ঘটনা যাহা হইয়াছিল, আমি তখন সে সব কিছ জানিতে পারি নাই, পরে জানিয়াছি। কমিশনর সাহেব মোটর ছটাইয়া তখনই নবাব সাহেবের বাড়ী গিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। নবাব সাহেব সমস্তই অস্বীকার করেন। এমন কি ! ......মহারাজার সঙ্গে তাঁহার পরিচয়ের কথা পৰ্য্যন্ত অস্বীকার করেন। তখন কমিশনার সাহেব ডিটেকটিভ ডিপার্টমেটের খাতা খুলিয়া নবাব সাহেবকে দেখাইয়া দিলেন—নবাব সাহেব কবে কবে কোন কোন দিন গ্র্যাণ্ড হোটেলে গিয়া মহারাজার সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছেন, মহারাজা কোন কোন দিন কোন কোন সময় পিয়ারী বাইজাঁর বাড়ী গিয়া নবাব সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছেন—সে সমস্তই পশুখানুপুঙ্খভাবে ডিটেকটিভগণ তাহাতে লিখিয়া রাখিয়াছে ! (এই ডিটেকটিভগণ অদ্ভুত জীব; ইহাদের অসাধ্য কাম নাই।. শুনিয়াছি, আমাদের পলায়নের পর পিয়ারী বিবি আমার নামে কিডন্যাপিং চাজী আনিলে, ডিটেকটিভগণ কলিকাতার সমস্ত ট্যাক্সিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমাদের ট্যাক্সিওয়ালার নিকট খবর পাইয়া ব্যান্ডেলে যায় এবং ব্যান্ডেল হইতে ঐ ট্রেণে দইখানি মাত্র সেকেণ্ড ক্লাস টিকিট বিক্রয় হওয়া দেখিয়া আমাদের স্টেশনে আসিয়া নামিয়া খুজিতে খুজিতে আমায় বাহির করে।) সেখান হইতে কমিশনব সাহেব নাকি সোজা গভর্ণমেণ্ট হাউসে গিয়া, লাট সাহেবের সহিত দেখা করিয়াছিলেন। করদ নাপতির নাম শুনিয়া, লাট সাহেব বিশেষ চিন্তিত