পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একালের ছেলে ፭ጻos সব আর সেখানে প্রকাশ করিসনে বাবা! কুটবিতা স্থলে এ সব আকছার হয়েই থাকে, কোন সংসারে না হয় ? কিন্তু জানতে পারলে বেয়াই বেয়ান মনে বড়ই কন্ট পাবেন। এ-সর কথা ঘণাক্ষরেও সেখানে প্রকাশ করিসনে লক্ষী বাপ আমার ! আমি বন্থ ব্লাহ্মণ, তোকে আশীব্বাদ করছি, তোর ভাল হবে। আমি চিঠিতে লিখে দিলাম যে জিনিষপত্তর তিনি যা পাঠিয়েছেন তা পেয়ে আমরা খুব খসী হয়েচি। বুঝলি ত ? তুইও সেই রকম বলবি। আর এই নে, দুটি টাকা, কাল যাবার সময় পথে জলটল খাবি।”—বলিয়া তাহার হাতে দুটি টাকা দিলাম। গোবধান হাত যোড় করিয়া বলিল, “আজ্ঞে কত্তা যখন লিষেদ করলেন, তখন এ সব কথা আমি চেপে যাব বইকি। ছিছি, এ সব কি পেরকাশ করবার কথা ?” টাকা দটি টেকে গজিতে গজিতে বলিল, “কিন্তু মাঠাকরণ ঐ যে বললেন ছেলের আবার বিয়ে দেবেন সেটা বাবঠাকুর ?”—বলিলাম, “না রে না। ওটা রাগের মাথায় বলেছেন বইত নয়। ওকি একটা কথা হল ? ও-সব কথা কিছু তুই প্রকাশ করিসনে।” গোবন্ধন স্বীকৃত হইল। বলিলাম, “দেখিস বাবা! ব্রাহ্মণের কাছে কথা দিয়ে যেন কথার খেলাপ করিসনে ৷” ਾਂ বাবা ঠাকুর, কথার খেলাপ হবে না।”—বলিয়া সে আমার পদধলি লইয়া প্রস্থান রল । কয়েক দিনই লক্ষ্য করলাম, ছেলেটার মনে সুখ নাই, মুখখানি বিষন্ন করিয়া বেড়ায়। তার গভ"ধারিণীর আচরণে মনে সে ব্যথা পাইয়াছে। তাহাও বটে,—এবং সেই জামাইষষ্ঠীর সময় গিয়াছিল, পাজার ছটীতেও শবশরে-বাড়ী যাইবে আশা করিয়াছিল, তাহার স আশা ভঙ্গ হওয়াতেও বোধ হয় সে মনঃক্ষণ। এখনই না হয় বড়া হইয়াছি, কিন্তু যে বয়সের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, যে সাধ-আহমাদ, তাহাও ত জানি । ফালগন মাসে উহার পরীক্ষা। মাঘ মাস গেলেই বিবাহের এক বৎসর পণে হইয়া যাইবে, ছেলে বাড়ী আসিবার পর্বেই বোমাকে আনাইয়া রাখিব। দেখিতে দেখিতে মহাপজা আসিয়া পড়িল । উৎসবের হাওয়ায়, বন্ধবোধবের সাহচষে ছেলের মুখখানিও আবার প্রফুল্ল হইয়া উঠিল। দই ছুটি ফরাইলে বাক্স-বিছানা বধিয়া প্রফুল্ল বন্ধমানে ফিরিবার জন্য প্রস্তুত হইল। বলিল, এবার বড়-দিনের ছয়টিতে আর বাড়ী আসিবে না, কারণ, তখন পরীক্ষা অত্যন্ত সন্নিকট-পড়াশনা লইয়া তাহাকে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকিতে হইবে। পরীক্ষা শেষ হইলে, একেবারে ফালগন মাসে আসিবে। গহিণী বলিলেন, "চা—র মা—স। চার মাস বাদে বাড়ী আসবি ? মাঝে একটা ছাটি-ছাটাতে দু’তিন দিনের জন্যেও এসে দেখা দিয়ে যেতে পারবি নে ?” প্রফুল্ল বলিল, “ছাটি-ছাটা তেমন আর কই ?” “কেন জগদ্ধাত্রী পজোর ছয়টি, তবে গিয়ে সরস্বতী পজোর ছয়টি ?” “জগন্ধাত্রী পজোর দুদিন ছয়টি আছে বটে, সঙ্গে একটা রবিবারও পড়েছে। কিন্তু তিন দিনের জন্যে আসতে গেলে সাতটি দিন পড়াশুনোর ক্ষতি। আগে দুদিন কতক্ষণে বাড়ী যাব কতক্ষণে বাড়ী যাব এই করে করে পড়ায় মন বসবে না। ফিরে গিয়েও, পড়ায় মন বসাতে দুদিন লেগে যাবে।” . গহিণী বললেন, “সারা বছরই ত মেহনত করাঁল বাবা, এক হস্তায় আর কি এসে যাবে ? তাতে কি আর পাস হওয়া আটকাবে ?” .