পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিরাজ-বেী আবেদন করিল। বুড়ো মানুষ তাহার কান্না দেখিয়া, সন্মত হইয়া তাহাকে গাড়ি করিয়া তারকেশ্বরে পৌঁছাইয়া দিয়া গেল। বিরাজ স্থির করিল, এই মন্দিরের আশে-পাশে কোথাও সে পডিয়া থাকিবে। এখানে কত লোক আসে যায়, যদি কোন উপায়ে একবার ছোটবোঁয়ের কাছে সংবাদ পাঠাইতে পারে। কঠিন-ব্যাধি-পীড়িত কত নরনারী, কত কামনায় এই দেব-মন্দির বিরিয়া ইতস্তত: পড়িয়া আছে, তাহাদের মধ্যে জাসিয়া বিরাজ অনেকদিনের পর একটু শাস্তি অনুভব করিল। তাহাদের মত তাহারও ব্যাধি আছে, কামনা আছে, সে তাই লইয়া এখানে নীরবে পড়িয়া থাকিতে পাইবে, কাহারও দৃষ্ট আকর্ষণ করিবে না, কাহারও অর্থহীন কৌতুহল চরিতার্থ করিতে হইবে না মনে করিয়া এত ছুঃখের মাঝেও আরাম পাইল ; কিন্তু রোগ দ্রুত বাড়িয়া চলিতে লাগিল । মাঘের এই দুর্জয় শীতে ও অনাহারে ছয়দিন কাটিয়া গেল, কিন্তু আর কাটিবে বলিয়াও অাশা হইল না, কেহ আসিবে বলিয়াও ভরসা রহিল না । ভরসা রছিল শুধু মৃত্যুর—সে তারই জন্য আর একবার নিজেকে প্রস্তুত করিতে লাগিল । সেদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হুইয়াছিল ; অপরাহ্ন না হইতেই আঁধার বোধ হইতে লাগিল । ও-বেলায় তাহার মুখ দিয়া অনেকখানি রক্ত উঠায় মৃতকল্প দেহটা যেন একেবারে নিঃশেষে ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছিল । সে মনে মনে বলিল, বুঝি আজই সব সাঙ্গ হইবে এবং তখন হইতেই মন্দিরের পিছনে মুখ গুজিয়া পড়িয়াছিল। দ্বিপ্রহরে ঠাকুরের পূজা হইয়া গেলে অন্যদিনের মত উঠা বসিয়া নমস্কার করিতে পারিল না—মনে মনে করিল। এতদিন স্বামীর চরণে সে শুধু মিনতি জানাইয়াই আসিয়াছে। সে অবোধ নয়, যে কাজ করিয়া ফেলিয়াছে, তাহাতে এ-জন্মের কোন দাবি রাধে নাই, শুধু পরজন্মের অধিকার না যায়, ইহাই চাহিয়াছে। না বুধিয়া অপরাধ করার শাস্তি যেন এ-জন্ম অতিক্রম করিয়া পরজন্ম পৰ্য্যস্ত ব্যাপ্ত হইতে না পায়, এই ভিক্ষাই মাগিয়াছে ; কিন্তু বেলা অবসানের সঙ্গে সঙ্গে তাহার চিম্ভার ধারা সহসা এক আশ্চৰ্য্য পথে ফিরিয়া গেল। ভিক্ষার ভাব রহিল না, বিদ্রোহের ভাব দেখা দিল। সমস্ত চিত্ত ভরিয়া এক অপূৰ্ব্ব অভিমানের স্বর অনিৰ্ব্বচনীয় মাধুর্ঘ্যে বাজিয়া উঠিল। সে তাহাতেই মগ্ন হুইয়া কেবল মনে মনে বলিতে লাগিল, কেন তবে তুমি বলেছিলে! অজ্ঞাতসারে কখন তাহার পত্ত্ব বা হাতখানি খলিত হইয়া পথের উপর পড়িয়াছিল, সে টের পাই নাই, সহসা তাহারই উপর" কঠিন ব্যৰ পাইরা সে অফুটম্বরে কাতরোক্তি করিয়া উঠিল। এটা বাতাবাতোধি। যে ব্যক্তি না দেখিয়া এই অবশ গীর্ণ হাতখানি মাড়াইয়া দিয়াছিল, সে অতিশয় লজ্জিত ব্যধিত হইয়া ফিরিয়া দাড়াইয়া ראפי