পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫిషి 3 গল্প-গ্রন্থাবলী “কত দিনের কথা ?” “বছর তিনেক হবে, কিবা কিছু বেশী। আমরা তখন পাটনায়। আগে ও আলিপর জেলে ছিল—এই মাস-দেড়েক হবে এখানে এসেছে।” “কত দিন পরে ওর খালাস হবে ?” “পাঁচ বছর জেল হয়েছিল, এখনও বুঝি বছর-খানেক বাকী আছে।” যাহার বিষয়ে এই আলোচনা হইতেছিল, এতক্ষণে সে লোক আদশ্য হইয়াছিল। মনোরমা বলিল, “আহা, ব্রাহ্মণের ছেলে, উচ্চশিক্ষিত, দেখ দেখি একবার কমেমরি ভোগ ! কেন বাপ তোরা এ-সব করিস ? কি কাজ এখানে ওকে করতে হয় ? আপিসের কাজ করে ত ? লেখাপড়া-জানা কয়েদী যখন 1" ইন্দবাব বলিলেন, “সাধারণতঃ লেখাপড়া-জানা কয়েদ হ’লে তাকে আপিসের কাজই দেওয়া হয় বটে, কিন্তু এ যে অসাধারণ ! গভর্ণমেণ্টের হুকুম নেই। ওকে বাগানের কাজে দিয়েছি, বেশী খাটতে হয় না।” প্রত্যেক জেলের সংলগ্ন একটা করিয়া বাগান থাকে, সেখানে জেলের খরচের জন্য শাক-সব্জী তরকারি-পাতি উৎপন্ন করা হয়। জেলের কয়েদীরাই সে-সব বাগানের কায্য করিয়া থাকে। এ সময় ভৃত্য আসিয়া সংবাদ দিল, গাড়ী আসিয়াছে। ইন্দবাব প্রস্তুত হইবার জন্য উঠিয়া গেলেন। রাত্রিতে আহারাদির পর শয়ন করিয়া মনোরমা সবামীকে বলিল, “ওগো দেখ, আমার মোক্ষদা ঐ ছেলেটির সমবন্ধে অনেক কথা জানে। তোমাতে আমাতে যখন কথা হচ্ছিল, ঘরের ভিতরে পাণ সাজতে-সাজতে ও বসে শনেছিল।” "কোন ছেলেটি ?” “ঐ যে যে তোমার বি-এ পাস করা ডাকাত, শরৎ মনুখুয্যে না কি।” “শরৎ বড়িয্যে।” - “যখন ঢাকায় ওর মোকদ্দমা হয়েছিল, খবরের কাগজে সব কথা মোক্ষদা পড়েছিল। বললে, ও ত ডাকাতি করেনি, গভর্ণমেণ্ট অন্যায় করে ওকে জেলে পরেছে। বি-এ পাস করে ঢাকা জেলার কোন ইস্কুলে নাকি ও হেড-মাটারি করত। সেখানে ওরা একটা সমিতি করেছিল। সেই গ্রামের আর আশপাশের গ্রামের আনেক ছোঁড়া সেই সমিতির মেম্বর ছিল । ও ছিল সেই সমিতির সভাপতি। কাছে একটা বড় গ্রামে কি সাহা নাম বললে, তার কাপড়ের দোকান ছিল। ওরা বার-বার তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে বিলিতী কাপড় আমদানী করে দোকানে বিক্ৰী করছিল। টাকার মহাজনীও করতো। গরীব চাষীদের বেশী সদে টাকা ধার দিয়ে ক্ৰমে তাদের জোৎ-জমা নীলেম করে নিয়ে তাদের সব্বনাশ করতো, এই রকমে সেই সাহা পোড়ারমুখো অনেক টাকা জমিয়েছিল। স্বদেশীওয়ালারা কত বারণ করে, তব সে শোনে না। তাই তাকে শাসিত দেওয়ার হিসেবেও বটে, দেশের কাজে লাগাবার জুন্যে টাকা-সংগ্রহের উদ্দেশ্যেও বটে, সমিতির লোকরা নৌকো করে গিয়ে এক রাতে সেই সাহা-মহাজনের বাড়ীতে ডাকাতি করেছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ধরা পড়ে। একজন মহারাণীর সাক্ষী হয়ে সব কথা প্রকাশ করে দেয়। ঐ শরৎ বড়িয্যে, সেই সমিতির সন্দার ছিল কিনা, তাই গভর্ণমেণ্ট রাগে ওকে সমৃদ্ধ জেল দিয়েছে, নইলে ও নিজে ডাকাতি করেনি, ডাকাতদের সঙ্গে ছিলও না।” ইন্দবাব বলিলেন, “হ্যাঁ, আমিও খবরের কাগজে ঐ রকমই যেন পড়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে। তোমার সহচরী ঐ দেশেরই লোক বুঝি ?” , “না না, ওর বাপের বাড়ী বশরেবাড়ী দুই-ই ত বরিশাল জেলায়। এ হ'ল ঢাকা