পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হারানো মেয়ে ●SS “কেন, রাজি হয় না কেন ? কিই বা তার বয়স। ও-বয়সে কত লোকের তো প্রথম বিবাহই হয় না।” ভগবতীবাব বলিলেন, “তা সে বোঝে কই বলন । আমার ধরন ঐ একটি ছেলে। ও যদি আর বিয়ে না করে, তা হলে তো বংশটাই লোপ হ’ল। কত ভাল ভাল সম্প্রবন্ধ এল, ও কিছুতেই রাজি হয় না। আমি কত বোঝালাম, ওর গভধারিণী কত কান্নাকাটি করলেন, কিছুতেই কিছ হ'ল না। দেখে শুনে আমরা তো একরকম হালই ছেড়ে দিয়েছি মশাই। অদষ্ট ! অদষ্ট ! সবই আদটি "—বলিয়া ভগবতীবাব চা-পান শেষ করিয়া পাণ মুখে দিলেন। সারদাবাব বলিলেন, “সে বউয়ের শোকটা বড় বেশী লেগেছে বোধ হয় ওকে।" “তা লেগেছে বটে। বউমা যাওয়ার পর থেকে ও মাছ-মাংস ছেড়ে দিয়েছে, আতপাৰ ধরেছে, একবেলা মাত্র খায়—বলে আমি ব্রহ্মচয্য অবলম্বন করেছি। ব্রহ্মচৰ্য্য করছে, আর পদ্য লিখছে।" “পদ্য লেখে নাকি ?” “হ্যাঁ, বউয়ের নামে রাশি রাশি পদ্য লিখেছে। ফি রবিবারে, খেয়ে দেয়ে, খাতা পেন্সিল নিয়ে, ইটিমারে গঙ্গা পার হয়ে শিবপুরে কোম্পানির বাগানে যায়, সেইখানে গাছতলায় বসে বসে না কি বউয়ের জন্যে কাদে, আর পদ্য লেখে। এ কথা তার বন্ধুদের মখেই আমি শুনেছি।” সারদাবাব বলিলেন, “ও রকম তো কতই শোনা গেছে। ঐ রকম ব্রহ্মচৰ্য্য-টয্য বেশী দিন তো টেকে না—শেষ কালে হয় নিজেই খুজে পেতে আবার বিয়ে করে, না হয় একটা কেলেণ্ডকারি করে বসে।” উভয়ে নীরবে তামাক টানিতে লাগিলেন। অন্যান্য বন্ধগণও একে একে আসিয়া সভাপথ হইতে লাগিলেন । u দই ॥ উপরে বর্ণিত ঘটনার মাসখানেক পরে, এক রবিবারে কবি-ব্রহ্মচারী কুলদাচরণ আহারাদি সারিয়া যথানিয়মে খাতা পেন্সিল লইয়া, শিবপরে যাত্রা করিল। বক্ষতলে নিজন পথানে বসিয়া, কবিতার খাতা খলিয়া কুলদা কবিতা লিখিতে প্রবত্ত। আজ এক ঘণ্টার উপর এই ভাবে সে বসিয়া আছে, মোটে পাঁচটি লাইন লেখা হইয়াছে, ষষ্ঠ লাইনটি দই তিনবার লিখিয়া, কাটিয়াছে, কিছুতেই আর মনের মত হইতেছে না, এমন সময় অদরে কোনও রমণীর ক্লন্দনধৰনি তাহার শ্রবণপথে প্রবেশ করিল। কুলদা চমকিয়া উঠিল । এখানে, এ সময়ে, কে স্ত্রীলোক কাঁদে ? খাতা ও পেন্সিল পকেটে ভরিয়া সে চট করিয়া উঠিয়া পড়িল, এবং যে দিক হইতে শব্দ আসিতেছিল, সেই দিকে ছুটিল। 毒 দুইটা মাত্র বক্ষের অন্তরাল পার হইয়া কুলদা দেখিল, বক্ষতলে একটি বাঙ্গালীর মেয়ে বসিয়া, দই হাতে মুখ ঢাকিয়া, ফলিয়া ফলিয়া কাঁদিতেছে। মুখখানি সে দেখিতে পাইল না, হাত দুখানির রঙ বেশ ফসর্ণ, বসন্ত্ৰাদি ভদ্রলোকের মেয়ের মতই। আকার দেখিয়া, মেয়েটি বালিকা না যাবতী তাহা কুলদা ঠিক ঠাহর করিতে পারিল না। নিকটে গিয়া বলিল, “এখানে বসে আপনি কাঁদছেন কেন ? কি হয়েছে আপনার ?” শনিয়া মেয়েটি মুখ হইতে হস্তাচ্ছাদন খলিয়া, একবার মাত্র আগন্তুকের মুখের দিকে চাহিল। আবার সে মুখ ঢাকিয়া কাঁদিতে লাগিল; তাহার কান্নার বেগ বাড়িয়া গেল ।