পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

や>& গলপ-গ্রন্থাবলী নারায়ণ ! জয় মা কালীঘাটের কালী !” গহিণী স্বামীর হস্ত পশ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “হাগিা, বাঁচবে ?" ডাক্তার বলিলেন, “তা এখন বলা যায় না। চেষ্টা করে দেখতে হবে।” গহিণী বলিলেন, “চেস্টা কর গো, ওকে বাঁচাও । আমি ওকে নেবো।” ডাক্তার সাহেব শিশকে তুলিয়া তাঁহার ডাক্তারখানা-ঘরে লইয়া গেলেন। বহিরাবরণ খলিলেন, উহা কাহারও পাৎলন ছোড়া বলিয়া বোধ হইল। তাহার নিনে সকোমল সিকে ফ্ল্যানেল, উহাও যেন কাহারও কামিজ বা পাঞ্জাবী ছোড়া। মেয়ে নয়, ছেলেই বটে ; এবং বাস্তবিক সদ্যোজাতই বটে। গতকল্য দিবসে বা হয়ত রাত্রিতেই ভূমিষ্ঠ হইয়া থাকিবে। নাড়ী কাটা হইয়াছে। স্নান করানোও হইয়াছে। শিশু সমভাবেই কাঁদিতে লাগিল। গহিণী বলিলেন, "ক্ষিদে পেয়েছে বোধ হয় গো, তাই অত কাঁদছে। দধ আনাবো ?” ডাক্তার বলিলেন, “না, একট, হলিক তৈরি কর।” পিরিট ল্যাম্প জালিয়া গহিণী জল সেইখানেই গরম করিতে লাগিলেন। ॥দই ॥ শিশর পরিচয্যর ভার আপাততঃ সোণার মার উপরই পড়িল। সে চারি পাঁচটি সন্তানের জননী—শিশুপালনবিধি ভালরপেই জানে। এখন দিন দুই তিন হলিকে চলিবে, তার পর একজন দগ্ধবতী ধাত্রীর প্রয়োজন । হাসপাতালে যাইবার সময় স্বামীকে বিভাবতী বলিয়া দিলেন, “দেখো না গো, তোমার প্রসতি বিভাগে যদি কাউকে পাও।” বেলা সাড়ে এগারোটায় ডাক্তার সাহেব হাসপাতাল হইতে ফিরিলেন । পলিসের একজন ইনপেক্টরও তাঁহার সঙ্গে আসিয়াছেন । হাসপাতালে পেপছিয়াই ডাক্তার সাহেব ঘটনার বিবরণ থানায় পত্র লিখিয়া পাঠাইয়াছিলেন, ইনপেক্টর বিনোদবাব তাই "এনকোয়োর” জন্য ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে আসিয়াছেন। বিতলের একটি আলো-বাতাসযন্ত ভাল ঘরে শিশ পথান পাইয়াছে। ডাক্তার সাহেব বিনোদবাবকে লইয়া সেই ঘরে প্রবেশ করিলেন। শিশুর জন্য ছোট খাটে শয্যা প্রস্তুত হইয়াছে। মাথায় তার রেশমে বোনা সন্দের কানঝাঁপা টুপী, গায়ে সাহেবদের কাঁচ ছেলের মত ফ্ল্যানেলের লম্বা কুত্তি পায়ে লাল উলের মোজা। পাশে সোণার মা বসিয়া আছে। ডাক্তার সাহেব বিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ সব কোথা থেকে এল রে ? কেউ দিয়ে গেল নাকি ?” * সোণার মা মাথা হে’ট করিয়া বলিল, “আঙ্কে না, মা এ সব কপাউন্ডার বাবকে দিয়ে হগ সাহেবের বাজার থেকে আনিয়েছেন।” ● ইনপেক্টরবাব এতক্ষণ একদটিতে শিশর মুখ পানে চাহিয়া ছিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “রঙ ত খুব ফশা! হ্যাঁ মশায়, এটা সাহেবদের ছেলে নয়ত ?" ডাক্তার সাহেব। না, না, তা নয়। য়ুরোপীয়ান কাঁচ ছেলের রঙ এর চেয়ে আরও অনেক ফশা হয়—একবারে ধবধবে শাদা। অতুিড়ের ছেলের রঙ এ রকম হলে ক্ৰমে সেটা শ্যামবণে দাঁড়ায়। বিনোদবাব। তা হলে আপনার মতে এ সাহেবের ছেলে নয়, বাঙ্গালীরই ছেলে ? ডাক্তার। বাঙ্গালী, কি খোট্টা, কি মাড়োয়ারী, তা কি করে বলবো ? তবে এর পিতামাতা দেশী লোকই, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। "এতকাল আপনি ম্যাটানিটি ওয়াডের চাভেজ রয়েছেন, আপনি ত এ সম্পবন্ধে বিশেষজ্ঞ।”—বলিয়া ইনপেন্টুরবাব পকেট-বকে বাহির করিয়া কি লিখিয়া লইলেন।