পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কাটা যাইত। আজ কিন্তু সে ভয় পাইয়াছিল। নম্র-কণ্ঠে কহিল, টাকা নেই বটে, কিন্তু অনেক টাকার গয়না ত আমাদের আছে— আছে, কিন্তু আমাদের নেই, তোমার আছে । তোমার বাবা দিয়েচেন তোমাকে । আমার তাতে একবিন্দুও অধিকার নেই—এ কথা আমার চেয়ে তুমি নিজেই ঢের বেশি জানো । বেশ, তা না নাও—আমি নগদ টাকা দিচ্চি। কোথায় পেলে ? সংসার-খরচ থেকে বাচিয়েচ ? ইহা চুড়ি বিক্রির টাকা। ইন্দু সহজে মিথ্যা কহিতে পারিত না। ইহাতে তাহার বড় অপমান বোধ হইত। আজ কিন্তু সে মিথ্যা বলিল। নরেন্দ্রর মুখের ভাব ভয়ানক কঠিন হইল। ধীরে ধীরে বলিল, তা হলে রেখে দাও, গয়না গড়িয়ে। আমার বুকের রক্ত জল করে যা জমা হয়েচে, তা এভাবে নষ্ট হতে পারে না। ইন্দু, কখনও তোমাকে কটু কথা বলিনি, চিরদিন শুনেই আসচি। কিন্তু তুমি না সেদিন দম্ভ করে বলেছিলে, কখনও মিথ্যে কথা বলো না ? ছিঃ– কমলা পর্দা ফাক করিয়া ডাকিল, মা, পিসিমা এসেচেন । কি হচ্চে গো বোঁ ? বলিয়া বিমলা ভিতরে আসিয়া দাড়াইল। ইন্দু মেয়েকে আনিয়া, তাহার গলার হারটা দুই হাতে সজোরে ছিড়িয়া স্বামীর মুখের সামনে ছুড়িয়া ফেলিয়া দিয়া কহিল, মিথ্যে বলতে আমি জানতাম না—তোমার কাছেই শিখেচি। তবুও এখনও পেতলকে সোনা বলে চালাতে শিখিনি। যে স্ত্রীকে ঠকায়, নিজের মেয়েকে ঠকায়, তার আর কি বাকি থাকে। সে অপরকে মিথ্যাবাদী বলে কি করে ? নরেন্দ্র ছিন্ন হারটা তুলিয়া প্রশ্ন করিল, কি করে জানলে পেতল ! যাচাই করিয়েচ ? তোমার বোনকে যাচাই করে দেখতে বল। বলিয়াই সে দুই চোখ রাঙা করিয়া বিমলার দিকে চাহিল। বিমলা দু'পা পিছাইয়া গিয়া বলিল, ও কাজ আমার নয় বোঁ, আমি এত ইতর নই যে, দাদার দেওয়া গয়না স্তাকরা ডেকে যাচাই করে দেখব । নরেন্দ্ৰ কহিল, ইন্দু, তোমাকেও দু-একখানা গয়না দিয়েচি, সেগুলো যাচাই করে দেখেচ ? দেখিনি, কিন্তু এবার দেখতে হবে । দেখো, সেগুলো পেতল নয় । ভগিনীর মুখের পানে চাহিয়া হারটা দেখাইয়া কহিল, এটা সোনা নয় বোন, পেতলই বটে। যে দুখে বাণ হয়ে ঐ একটি মেয়ের জন্মদিনে তাকে ঠকিয়েচি, সে ३१७