পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শুভদ আর দুই-একদিনেই নিঃশেষ হইয়া যাইবে, কিন্তু শুভদা মুখ ফুটিয়া তাহার স্বামীর নিকটে বলিতে পারে না, কাহাকেও জানাইতে তাহার ইচ্ছা হয় না, শুধু আপন মনে যাহা আছে তাহ নাড়া-চাড়া করে । আজ তিন দিবস পরে অনেক রাত্রে স্বামীর শ্রান্ত পা দুটি টিপিতে টিপিতে শুভক্ষা মনে মনে অনেক যুদ্ধবিগ্রহ তৰ্ক-বিতর্ক করিয়া মুখ ফুটিয়া কহিল, আর নেই, সব টাকা ফুরিয়ে গেছে ! হারাণচন্দ্র চক্ষু মুদিয়া নিতান্ত সাধারণভাবে বলিলেন, দশ টাকা আর কতদিন থাকে । আর কোন কথা কহিল না। দু'জনেই সে রাত্রের মত চুপ করিয়া রহিল। শুভদা ভাবিয়াছিল, কাল কি হইবে তাহা জিজ্ঞাসা করিয়া লইবে ; কিন্তু পারিল না । বিনা কারণে নিজেই অপরাধী সাজিয়া চুপ করিয়া রহিল। সে ভাবিয়াছিল, খরচ করিতে করিতে টাকা কেন ফুরাইয়া যায়, এজন্ত বিশেষ তিরস্কৃত হইবে । সত্য সত্য তিরস্কৃত হইলে বোধ হয় দোষ ক্ষালন করিতে প্রয়াস করিত, কিন্তু তৎপরিবর্কে সহানুভূতি পাইয়া আর কথা ফুটিল না। - পরদিন ভোর না হইতেই হারাণচন্দ্ৰ চলিয়া গেলেন ৷ ললনা যেরূপ গৃহকৰ্ম্ম করে, করিতে লাগিল, রাসমণি নিয়মিত স্নান করিয়া আসিয়া মাটির শিব গড়িয়া ঘরে বসিয়া পূজা করিতে লাগিলেন, শুধু শুভদার হাত-পা চলে না, মানমুখে এখানে একবার, ওখানে একবার করিয়া বসিয়া দাড়াইয়া রহিল। বেলা আটটা বাজে দেখিয়া ললনা কহিল, মা, তুমি আজ ঘাটে গেলে না ? বেলা যে অনেক হ’ল । এই যাই । ললন কিছুক্ষণ পরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, জননী সেইখানে সেইভাবেই বসিয়া আছেন । ধিস্মিত হইয়া বলিল, কি হয়েছে মা ? কিছুই না । তবে আমন করে বসে আছ যে ? আর কি করব ? সেকি ? নাবে না ? ভাত চড়াবে না ? শুভদা তাহার চক্ষু দুটি কন্যার মুখের উপর রাখিয়া ভয়ে ভয়ে বলিল, আজ কিছু নেই! কি নেই। কিছুই নেই। ঘরে একমুঠো চাল পর্য্যন্ত নেই। ললনার মুখ শুকাইয়া উঠিল—তবে কি হবে মা ? ছেলেরা কি খাবে ? מס\