পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

श्रृंश्लोझ স্বামীর মুখের প্রতি চাহিয়া কহিল, আচ্ছা, নয়নবাবুকে ধরে চারুবাবুর বাড়িতে আজ রাতটার মত ওঁর শোবার ব্যবস্থা করা যায় না ? তাদের পাকা বাড়ি-বসবার ঘরটাও আছে, ওঁর কষ্ট হ’তো না । _ সৌজন্তের আবরণে উভয়ের শ্লেষের এই সকল প্রচ্ছন্ন ঘাত-প্রতিঘাতে মহিম মনে মনে অধীর হইয়া উঠিতেছিল ; কিন্তু কি করিয়া থামাইবে ভাবিয়া পাইতেছিল না, এমনি অবস্থায় স্বরেশ নিজেই তাহার প্রতিকার করিল ; সহসা হাত জোড় করিয়া বলিল, আমার ঘাট হয়েচে বৌঠান, বরং একটু চা-টা দাও, খেয়ে গায়ে জোর করে নিয়ে তার পরে নয়নবাবুকে বল, শ্রবণবাবুকে বল–চন্দ্রবাবুর পাকা ঘরে শোবার জন্যে স্বপারিশ করতে রাজি আছি। কিন্তু যাই বল মহিম, এর ওপর এত টান সত্যি হলে, খুশী হবার কথা বটে। মহিমের হইয়া অচলাই তাহার উত্তর দিল ; সহাস্তে কহিল, খুশী হওয়া না-হওয়া মানুষের নিজের হাতে ; কিন্তু এ আমার শ্বশুরের ভিটে, এর ওপর টান না জন্মে বড়লাটের রাজপ্রাসাদের ওপর টান পড়লে সেইটে ত হ’ত মিথ্যে । যাক, আগে গায়ে জোর হোক, তার পর কথা হবে । আমি চায়ের জল চড়াতে বলে এসেচি, পাঁচ মিনিটের মধ্যে এনে হাজির করে দিচ্চি—ততক্ষণ মুখ বুজে একটু বিশ্রাম করুন ; বলিয়া অচলা হাসিয়া প্রস্থান করিল। Wo সে চলিয়া যাইতেই মুরেশের বুকের জালাটা যেন বাড়িয়া উঠিল। নিজেকে সে চিরদিনই দুৰ্ব্বল এবং অস্থির-মতি বলিয়াই জানিত, এবং এজন্য তাহার লজ্জা বা ক্ষোভও ছিল না। ছেলেবেলায় বন্ধুবান্ধবেরা যখন মহিমের সঙ্গে তুলনা করিয়া তাহাকে খেয়ালী প্রভৃতি বলিয়৷ অম্বুযোগ করিত, তখন সে মনে মনে খুশী হইয়া বলিত, সে ঠিক যে, তাহার সঙ্কল্পের জোর নাই, সে প্রবৃত্তির বাধ্য ; কিন্তু হৃদয় তাহার প্রশস্ত—সে কখনও হীন বা ছোট কাজ করে না। সে নিজের আয় বুঝিয়া ব্যয় করিতে জানে না, পাত্রাপাত্র হিসাব করিয়া দান করিতে পারে না-মন কাদিয়া উঠিলে গায়ের বস্ত্রখানা পৰ্য্যন্ত বিসর্জন দিয়া চলিয়া আসিতে তাহার বাধে না-তা সে যাহাকে এবং যে কারণেই হোক ; কিন্তু একথা কাহারও বলিবার জে নেই যে, সুরেশ কাহাকেও দ্বেষ করিয়াছে, কিংবা স্বার্থের জন্য এমন কোন কাজ করিয়াছে যাহা তাহার করা উচিত ছিল না। মুতরাং আজন্মকাল হৃদয়ের ব্যাপারে যাহার একান্ত দুৰ্ব্বল বলিয়াই অখ্যাতি ছিল এবং নিজেও যাহা সে সত্য বলিয়াই বিশ্বাস করিত, সেই স্বরেশ যখন অকস্মাৎ অচলার সম্পর্কে শেষ মুহূর্তে আপনার এত বড় কঠোর সংযমের পরিচয় পাইল, তখন নিজের মধ্যে এই অজ্ঞাত শক্তির দেখা পাইয়া কেবল আত্মপ্রসাদই লাভ করিল না, তাহার সমস্ত হৃদয় গৰ্ব্বে বিস্ফারিত হইয়া উঠিল। অচলার বিবাহের পরে ছুটে দিন সে երվ։