পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৃহদাহ বাহিরের অন্ধকার গাঢ় হইয়া উঠিতে লাগিল এবং তাহাই ভেদ করিয়া পরপানের ধূসর সৈকতভূমি এক হইতে অন্য প্রাস্ত পৰ্য্যন্ত এই দুইটি ক্ষুব্ধ মৌন লজ্জিত নারীর চক্ষের উপর স্বপ্নের মত ভাসিতে লাগিল । এইভাবেই হয়ত আরও বহুক্ষণ কাটিতে পারিত, কিন্তু কি ভাবিয়া বীণাপাণি সহসা তাহার চৌকিটা অচলার পাশে টানিয়া আনিল এবং নিজের ডান হাতখানি সর্থীর কোলের উপর ধীরে ধীরে রাখিয়া চুপি চুপি কহিল, ও-পারের ওই চরটার পানে চেয়ে চেয়ে আমার কি মনে হচ্ছিল জান দিদি ? মনে হচ্ছিল যে ঠিক তুমি । যেন অমনি অন্ধকার দিয়ে ঘেরা একটুখানি—ও কি, এমন শিউরে উঠলে কেন ভাই ? - অচলা মুহূৰ্ত্তকাল নিৰ্ব্বাক থাকিয়া অফুটম্বরে বলিল, হঠাৎ কেমন যেন শীত ক’রে উঠল ভাই । ...a বীণাপাণি উঠিয়া গিয়া ঘরের ভিতর হইতে একখানা গরম কাপড় জানিয়া অচলার সর্বাঙ্গে সযত্বে ঢাকিয়া দিয়া স্বস্থানে বসিল, কহিল, একটা কথা তোমাকে ভারি জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয় দিদি, কিন্তু কেমন যেন লজ্জা করে । যদি রাগ না गुइ ड- * অজানা আশঙ্কায় অচলার বুকের ভিতরটা দুলিতে লাগিল। পাছে বেশী কথা বলিতে গেলে কাপিয়া যায়, এই ভয়ে সে শুধু কেবল একটা না বলিয়াই রি हट्टेल । বীণাপাশি আদর করিয়া তাহার হাতের উপর একটুখানি চাপ দিয়া বলিতে লাগিল, এখন যেন তুমি আমার দিদি, আমি তোমার ছোট বোন। কিন্তু সেদিন গাড়িতে ত আমি তোমার কেউ ছিলাম না, তবে কেন নিজের পরিচয় আমার কাছ থেকে অমন ক’রে লুকোতে চেয়েছিলে ? যিনি স্বামী, তাকে বললে কেউ নয়— বললে, পীড়িত স্বামী অন্য কামরায়, তাকে নিয়ে জব্বলপুরে যাচ্ছে, কিন্তু আমাকে ঠকাতে পারনি। আমি ঠিক চিনেছিলাম, উনি তোমার কে। আবার বললে, তোমরা ব্রাহ্ম, বলিয়া একবার সে একটু মুচকিয়া হাসিয়া কহিল, কিন্তু এখন দেখচি, তোমার কর্তাটির পৈতের গোছা দেখলে, বিষ্ণুপুরের পাচক-ঠাকুরের দল পৰ্য্যন্ত লজ্জা পেতে পারে। আচ্ছা ভাই, কেন এত মিথ্যা কথা বলেছিলে বল ত ? অচলা জোর করিয়া একটু শুষ্ক হাসি হাসিয়া কহিল, যদি না বলি ? বীণাপাণি কহিল, তা হলে আমিই বলব। কিন্তু আগে বল, যদি ঠিক কথাটি বলতে পারি, কি আমাকে দেবে ? অচলার বুকের মধ্যে রক্ত-চলাচল যেন বন্ধ হইয়া যাইবার মত হইল। তাহার মুখের উপরে ৰে মৃত্যু-পাণ্ডুরতা নাইবা আসিল বাতির ক্ষীণ আলোকে নীণাপাশিৱ »ዋm