শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ একটা বড় ঘরের মেঝের উপর মূল্যবান প্রকাণ্ড কার্পেট পাতিয়া স্থান করা হইয়াছে। তাহাতে জন-দুই দেশীয় ওস্তাদ যন্ত্র বঁাধিতে নিযুক্ত। অনেকগুলি ছেলেমেয়ে তাহদের বিরিয়া ধরিয়া অবস্থান করিতেছে। গৃহস্বামী অন্য কোথাও ছিলেন, খবর পাইয়া হাস-ফাস করিতে করিতে হাজির হইলেন, দুই হাত থিয়েটারি ভঙ্গিতে উচু করিয়া ধরিয়া কহিলেন, স্বাগত ভদ্রমগুলি ! মোঃ ওয়েলকাম্। ওস্তাদজীদের ইঙ্গিতে দেখাইয় গল খাটো করিয়া চোখ টিপিয়া বলিলেন, ভয় পাবেন না যেন । কেবল এদের ম্যাও ম্যাও শোনাবার জন্তই আহবান করে আনিনি। শোনাবো, শোনাবো, এমন গান আজ শোনাবো যে আমাকে আশীৰ্ব্বাদ করে তবে ঘরে ফিরবেন । শুনিয়া সকলেই খুশি হইলেন। সদা-প্রসন্ন অবিনাশবাবু আনন্দে মুখ উজ্জল করিয়া কহিলেন, বলেন কি আপ্তবাবু? এ দুর্ভাগ দেশের যে সবাইকে চিনি, হঠাৎ এ রত্ব পেলেন কোথায় ? আবিষ্কার করেচি মশাই, আবিষ্কার করেচি। আপনারাও যে একেবারে না চেনেন তা নয়, সম্প্রতি হয়ত ভুলে গেছেন। চলুন দেখাই । বলিয়া তিনি সকলকে একপ্রকার ঠেলিতে ঠেলিতে আনিয়া তাহার বসিবার ঘরে পর্দা সরাইয়া প্রবেশ করিলেন। লোকটি ঈষৎ শু্যামবর্ণ, কিন্তু রূপের আর অন্ত নাই। যেমন দীর্ঘ ঋজু দেহ, তেমনি সমস্ত অবয়বের নিখুত সুন্দর গঠন। নাক, চোখ, ভ্র, ললাট, অধরের বাক রেখাটি পৰ্য্যন্ত—একটিমাত্র নরদেহ এমন করিয়া সুবিন্যস্ত হইলে যে কি বিস্ময়ের বস্তু হয় তাহা এই মানুষটিকে না দেখিলে কল্পনা করা যায না। চাহিয়া হঠাৎ চমক্ লাগে। ব্যস বোধ করি বত্ৰিশের কাছে গিয়াছে, কিন্তু প্রথমে আরও কম মনে হয। সুমুখের সোফায় বসিয়া মনোরমার সহিত গল্প করিতেছিলেন, সোজা হইয়া বসিয়া একটু হাসিয়া কহিলেন, আসুন। মনোরমা উঠিয় দাড়াইয়া আগন্তুক অতিথিদের নমস্কার করিল। কিন্তু প্রতিনমস্কারের কথা কাহারও মনেও হইল না, সকলে অকস্মাৎ এমনি বিচলিত হইয় পড়িলেন। অবিনাশবাবু বয়সেও বড়, কলেজের দিক দিয়া পদগৌরবেও সকলের শ্রেষ্ঠ । তিনি প্রথমে কথা কছিলেন, বলিলেন, আগ্রায় কবে ফিরে এলেন শিবনাথবাবু? বেশ যা হোক। কই, আমরা ত কেউ খবর পাইনি ? শিবনাথ কহিল, পাননি বুঝি? অাশ্চৰ্য্য! তাহার পরে হাসিমুথে বলিলেন, বুঝতে পারিনি অবিনাশবাবু, আমার আসার পথ চেয়ে আপনারা এতখানি উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন। b"
