পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন উত্তর শুনিয়া অবিনাশবাবু যদিচ হাসিবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু তাহার সহযোগিগণের মুখ ক্রোধে ভীষণ হইয়া উঠিল। যে কারণেই হোক, ইহার যে পূৰ্ব্ব হইতেই এই প্রিয়দর্শন গুণী ব্যক্তির প্রতি প্রসন্ন ছিলেন না তাহ৷ আভাসে জান৷ থাকিলেও একের এই বক্রোক্তির অন্তরালে ও অন্ত সকলের কঠিন মুখচ্ছবির ব্যঞ্জনায় এই বিরুদ্ধতা এমনি কটু রূঢ় এবং স্পষ্ট হইয়া উঠিল যে, কেবলমাত্র মনোরম ও তাহার পিতাই নয়, সদানন্দ-প্রকৃতি অবিনাশ পৰ্য্যন্ত অপ্রতিভ হইয়া পড়িলেন। কিন্তু ব্যাপারটা আর গড়াইতে পাইল না, আপাততঃ এইখানেই বন্ধ হইল। পাশের ঘর হইতে ওস্তাদজীর কণ্ঠস্বর গুনা গেল, এবং পরক্ষণেই বাড়ির সরকার আসিয়া সবিনয়ে নিবেদন করিল যে, সমস্ত প্রস্তুত, শুধু আপনাদের অপেক্ষাতেই গানবাজনা সুরু হইতে পারিতেছে না । পেশাদার ওস্তাদী সঙ্গীত সচরাচর যেমন হইয থাকে এ-ক্ষেত্রেও তেমনিই হইল— বিশেষত্ব-বর্জিত মামুলি ব্যাপার, কিন্তু কিয়ৎকাল পরে ক্ষুদ্রপরিসর এই সঙ্গীতের আসরে, স্বল্প কয়টি শ্রোতার মাঝখানে শিবনাথের গান সত্যসত্যই একেবারে অপূৰ্ব্ব শুনাইল। শুধু তাহার অতুলিত অনবদ্য কণ্ঠস্বরে নহে, এই বিষ্ঠায সে অসাধারণ সুশিক্ষিত ও তাহাতে পারদর্শী। তাহার গাহিবার অনাড়ম্বর সংযত ভঙ্গি, সুরের স্বচ্ছল সরল গতি, মুখের অদৃষ্টপূর্ব ভাবের ছায়, চোখের অভিভূত উদাস দৃষ্টি, সমস্ত একই সমযে কেন্দ্রীভূত হইয, সেই সৰ্ব্বাঙ্গীণ তান-লয়-পরিশুদ্ধ সঙ্গীত যখন শেষ হইল তখন মনে হইল শ্বেতভুজ যেন তাহার দুই হাতের আশীৰ্ব্বাদ উজাড় করিয়া এই সাধকের . মাথায় ঢালিয়া দিয়াছেন । কিছুক্ষণ পৰ্য্যন্ত সকলেই বাক্যহীন স্তব্ধ হইয়া রহিলেন, শুধু বৃদ্ধ আমির খাঁ ধীরে ধীরে কহিলেন, অ্যাস কভি নহি শুন । মনোরম শিশুকাল হইতে গান-বাজনার চর্চা করিয়াছে, সঙ্গীতে সে অপটু নহে, তাহার সামান্য জীবনে সে অনেক কিছুই শুনিযাছে, কিন্তু সংসারে ইহাও যে আছে, এমন করিয়াও যে সমস্ত বুকের মধ্যটা সঙ্গীতের ছন্দে ছন্দে টন্‌ টন্‌ করিতে থাকে তাহা সে জানিত না। তাহার দুই চক্ষু জলে ভরিফ উঠিল এবং ইহাই গোপন করিতে সে মুখ ফিরাইয়া নিঃশব্দে উঠিয়া গেল। অবিনাশ বলিলেন, শিবনাথ সহজে গাইতে চায় না, কিন্তু ওর গান আমরা আগেও শুনেচি। তুলনাই হয় না । এই বছর-খানেকের মধ্যে যেন ও ইনফিনিটুলি ইম্প্রভ করেচে। হরেন কহিলেন, হুঁ ৷